April 29, 2024, 5:16 pm
ব্রেকিং নিউজ

কৃষিকাজে বাড়ছে ঘোড় চাষের কদর

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Tuesday, February 6, 2024
  • 39 দেখা হয়েছে

নওগাঁ প্রতিনিধি:
ইতিহাসের পাতায় রাজা-বাদশাদের সঙ্গী হিসেবে বিশেষ ভূমিকায় ছিল ঘোড়ার কদর। যুদ্ধের ময়দানেও ছিল ঘোড়ার উপস্থিতি। যোদ্ধারা ঘোড়সওয়ার হয়ে যুদ্ধের ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তেন। তবে সময়ের আবর্তে সেই দিন ফুরিয়েছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে ঘোড়া এসেছে বাংলার খেলার মাঠে, এমনকি কৃষি মাঠেও। কৃষিকাজে বাড়ছে ঘোড় চাষের কদর।

সম্প্রতি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষবাসের দৃশ্য চোখে পড়লেও এবার দেখা মিলেছে বোরো মাঠ প্রস্তুতে ঘোড়া নিয়েই মাঠে নেমেছেন চাষি। কর্দমাক্ত জমিতে ঘোড়া দিয়েই করছেন হালচাষ ও বোরোর মাঠ তৈরি। কৃষিকাজে ঘোড়ার ব্যবহারে এমন ঘটনাটি নজর কেড়েছে কৃষক মহলে।

কৃষকেরা বলছেন, গরুর চাইতে ঘোড়ার দাম কম। তাই গরু-মহিষের পরিবর্তে ঘোড়া দিয়েও জমি চাষ লাভজনক।

সোমবার উপজেলার বরেন্দ্র বাজারসংলগ্ন মাঠে ঘোড়া দিয়ে বোরোর মাঠ প্রস্তুত করছিলেন এক চাষি। জমির কাদায় ঘোড়া নামিয়ে মই দিয়ে বোরোর জমি সমান করছিলেন তিনি। কাছে গিয়ে সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে মাঠ থেকে উঠে আসেন ওই চাষি।

আলাপচারিতায় জানা যায় তার নাম রফিকুল। পার্শ্ববর্তী ভাদরণ্ড গ্রামে তার বাড়ি। কৃষিকাজ করেই সংসার নির্বাহ করেন। আর এ কৃষিকাজে তিনি গরু-মহিষের পরিবর্তে ঘোড়ার ব্যবহার শুরু করেছেন। ২ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করবেন তিনি, তাই মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছেন।

তিনি জানান, মূলত ভাড়ায় জমি চাষের জন্যই গরুর পরিবর্তে ঘোড়া পালছেন।

তিনি জানান, ১৪ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনেছেন। জমি চাষের এক জোড়া ভালো গরুর দাম বর্তমান বাজারে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। আমার মতো গরিব কৃষকের অত টাকা দিয়ে গরু কেনা সম্ভব নয়। তাই দুইটা ঘোড়া কিনেছি। ভাড়ায় মানুষের বোরো জমিতে বিঘাপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় মই দিয়ে সমান করি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার ও ঘোড়ার খাবার হয়ে যায়।

একই গ্রামের আরেক কৃষক মইনুর রহমান। তিনিও ঘোড়া দিয়ে চাষ করেন। তিনি জানালেন, জামালপুর থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি ঘোড়া কিনেছেন তিনি। গরুর মতোই ঘোড়া দিয়ে চাষবাস করা যায়। কোনো অসুবিধা হয় না। আবার ঘোড়ার পিঠে চেপে চলাচল করা যায়। হালকা মালামালও বহন করা যায়। তিনিও ভাড়ায় মানুষের জমিতে ঘোড়া দিয়ে চাষবাস করেন।

উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক মামুন বলেন, আমি ৫ বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে চাষাবাদ করছি। আমি আমার এলাকা ছাড়াও ভাড়ায় সাবাইহাট, দেলুয়াবাড়ী, কেশরহাট, মোহনপুর, ছাতড়া মাঠে চাষাবাদ করতে যাই।

শ্রীমন্তপুর গ্রামের কৃষক আফজাল জানান, অন্যদের দেখাদেখি তিনিও একটি ঘোড়া কিনেছেন জমি চাষ আবাদের জন্য।

চাচড়াপাড়া গ্রামের বোরো চাষি সাদেকুল ইসলাম জানান, এবার ৮ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করছেন তিনি। পাওয়ারটিলারের মাধ্যমে জমিতে হাল দিলেও জমি ঠিকমতো প্রস্তুত হয় না এবড়ো-খেবড়ো উঁচু নিচু হয়ে থাকে। তাই জমিতে চারা রোপণের পূর্বে মই দিয়ে জমি ফাইনালি প্রস্তুত করতে হয়। আর এ কাজটি গরু-মহিষের মই দিয়ে করতে হয়; কিন্তু বর্তমানে গরু-মহিষের মাধ্যমে চাষবাস কমে যাওয়ায় এ কাজে বেশি টাকা দিতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বর্তমানে এ কাজে ঘোড়ার ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে সহনীয় টাকায় মই দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার ৮ বিঘা জমিতেই ঘোড়ার মই দিয়ে বোরোর চারা রোপণ করেছি। ঘোড়ার মই গরু-মহিষের মতোই।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা এখন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করে অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করেন। বর্তমানে সনাতন পদ্ধতির কৃষিকাজ নেই বললেই চলে। তবে কেউ ঘোড়া দিয়ে চাষবাস করলে তার নিজস্ব কারণে করতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের সব সময় কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102