May 5, 2024, 6:55 pm
ব্রেকিং নিউজ

ঈদুল ফিতর ও পালনীয় আমল!

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Monday, April 8, 2024
  • 12 দেখা হয়েছে

অধ্যাপক মু. সহিদুল ইসলাম

‘ঈদ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ বারবার ফিরে আসা। যেহেতু এ দিবসটি প্রতিবছরই ফিরে আসে তাই একে ‘ঈদ’ বলা হয়। দ্বিতীয়ত ‘আদত’ (অভ্যাস) থেকে ঈদ এসেছে। আল­াহ তায়ালা প্রতিবছর ঈদের মাধ্যমে বান্দাহকে দয়া ও অনুগ্রহ করে থাকেন। আল­াহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এটি আতিথেয়তা। অর্থাৎ অন্যান্য দিন খাওয়া-দাওয়া হারাম ছিল, আজ খাওয়া-দাওয়া হালাল হয়ে গেল। তাই ঈদের দিন খেতেই হবে ‘রোযা রাখা হারাম’। এ জন্য আল­াহর নিয়ামত ও জিয়াফত ভোগ করার চিরন্তন অভ্যাস বা আচার অনুষ্ঠানকে ঈদ বলা হয়। ‘ঈদুল ফিতর’ মানে রোযা ভাঙ্গার ‘ঈদ’। ঈদের দিন রোযা ভাঙ্গা হলো প্রথম ও প্রধান কাজ। রাসূল (সা:) মিষ্টি, খেজুর খেয়ে ঈদের সূচনা করতেন।
হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) যখন মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করেন তখন দেখেন মাদিনার লোকেরা বৎসরে দুই দিন জাতীয় উৎসব পালন করে। এ দিনে তারা খেলাধূলা-নাচগান, আনন্দ-স্ফুর্তি কিংবা ঘোড় দৌড়ের আয়োজন করে। কেউবা আবার মদ-জুয়া, নিয়েও ব্যস্ত থাকতো। রাসূল (সা:) তাদের জিজ্ঞেস করলো তোমরা এসব কী করছো? তারা জবাব দিলো ইয়া রাসূলাল­াহ (সা:) এ দুটি দিন আমাদের ‘জাতীয় দিবস’ সেই প্রাচীন কাল থেকেই আমরা তা করে আসছি। রাসূল (সা:) বললেন “আল­াহ তোমাদের জন্য আরো উত্তম ২টি দিন দান করেছেন। তা হলো (ক) ঈদুল ফিতর (খ) ঈদুল আযহা! (আহমাদ, আবু-দাউদ)।
প্রত্যেক জাতির জাতীয় উৎসব রয়েছে, এই দিনে তারা রঙিন আবেগে মেতে উঠে। অনেকটা লজ্জা-শরমের তোয়াক্কা না করে ‘খাও-দাও, ফুর্তি করো’-এই স্লোগানে আত্মনিয়োগ করে। কিন্তু মুসলমানদের ঈদ হলো ‘ইবাদত’। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আল­াহ বান্দার গুনাহ মাফ করেছেন। সেই গুনাহ মাফের আনন্দে বান্দা সম্মিলিতভাবে তার শোকর আদায় পূর্বক ঈদগাহে গিয়ে সালাত আদায় করবে এবং আল­াহর দরবারে মুনাজাত করবে। এটাই বান্দার ঈদ। ঈদের দিন মুসলমানগণ পবিত্র অনুভূতি নিয়ে নতুন জামা-কাপড় পরবে, উন্নত খাবার গ্রহণ করবে,আত্মীয়স্বজন এবং অসহায়-দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াবে এটাই হলো রাসূল (সা:) এর শিক্ষা।
মহান আল­াহ-তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেন ‘তোমরা আল­াহর উদ্দেশ্যে তাকবীর উচ্চারণ করো, কেননা তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন’ (সূরা বাকারা-১৮৪)
ঈদের দিন করণীয়:
১) ঈদের দিন গোসল করা ও নতুন পোষাক পরা মুস্তাহাব।
২) ঈদুল ফিতরের দিন খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদুল আযহার দিন না খেয়ে যাওয়া সুন্নাত।
৩) ঈদুল আযহার সালাত আদায়ের পর কুরবানীর পশুর মাংস দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত।
৪) ঈদের দিন পায়ে হেটে মসজিদ / ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।
৫) একপথে যাওয়া এবং অন্যপথ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসা সুন্নাত।
৬) বেশি বেশি তাকবীর পড়া এবং তা উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। রাসূল (সা:) ঘর থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত তাকবীর দিতেন।
৭) ফজরের সালাতের পর অন্য কোন সালাত না পড়া উত্তম।
৮) ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া এবং প্রথম কাতারে অংশগ্রহণ করা অতি সওয়াবের কাজ।
৯। ঈমাম ইবনে তাইমিয়া (রা:) বলেন, ঈদুল ফিতরের চাঁদ উদয় হওয়ার পর থেকে সালাত আদায় পর্যন্ত রাসূল (সা:) তাকবীর উচ্চারণ করতেন।
১০) আল­ামা ইবনুল কাইয়্যিম (রা:)যাদুল মা’আদ কিতাবে লিখেছেন রাসূল (সা:) ঈদের দিন উত্তম পোষাক পরিধান করতেন। তাঁর একজোড়া সুন্দর পোষাক ছিল যা জুমুআ’র দিনও দুই ঈদে তিনি পরিধান করতেন।
১১) রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আল­াহ-তায়ালা তার বান্দার উপর প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’।
১২) হযরত ওমর (রা:) বাজার থেকে একটি রেশমি কাপড়ের জুব্বা কিনে রাসূল (সা:) কে দিয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল­াহ (সা:) আপনি ঈদের সময় আগত গণ্যমান্য অতিথিদের সাক্ষাতের সময় এটি পরিধান করবেন’। রাসূল (সা:) বললেন, ‘এটি ঐ ব্যক্তির পোষাক যে আখিরাতে আল­াহর কাছে কিছুই পাবেনা। (বুখারি)
১৩) ঈদের দিন রাসূল (সা:) খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন আর তা ছিল বিজোড় সংখ্যায়।
১৪) হযরত উম্মে আতীয়া (রা:) বর্ণনা করেন রাসূল (সা:) আমাদের নির্দেশ দিলেন, ‘তোমরা পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহিনীসহ সকল মহিলা ঈদের সালাতে অংশ গ্রহণ করবে।
১৫) খোলা মাঠে ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বর্ণনা করেন রাসূল (সা:) সারা জীবন ঈদগাহে সালাত আদায় করেছেন, বৃষ্টির কারণে একবার মসজিদে সালাত আদায় করেছেন (বুখারি)
১৬) হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, একবার বৃষ্টির কারণে রাসূল (সা:) ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করেছেন।
সাহাবায়ে কেরাম একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন ‘আল­াহ আমাদের রমজানের রোযা কবুল করুন এবং পুনরায় রমজানকে ফিরিয়ে দিন’। সালাম বিনিময়, কুশল জিজ্ঞাসা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি ও বন্ধু বান্ধবের বাড়িতে বেড়ানো উত্তম কাজ ঈদের দিন শিক্ষামূলক আলোচনা ও প্রতিযোগিতা, নাটক, ফিল্ম ও ইসলামী সংগীতের আয়োজন করা উত্তম তবে ইসলাম বিরোধী কোন আয়োজন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। যা বর্তমানে যুগে হয়ে থাকে।

লেখক-
অধ্যাপক মু. সহিদুল ইসলাম
জয়েন্ট সেক্রেটারী
আদর্শ শিক্ষক পরিষদ
কুমিল­া মহানগরী।
০১৭১১৯৫৩৮১৬

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102