May 3, 2024, 8:14 am
ব্রেকিং নিউজ

ক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীকে গুলি করা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Tuesday, March 5, 2024
  • 48 দেখা হয়েছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত, বদলি ও বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ৮১ রাউন্ড তাজা গুলিসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গুলির ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা ও অবৈধ দুটি পিস্তল ও তাজা গুলিসহ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে আইটেম পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক রায়হান শরীফ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করে। পরে আহত অবস্থায় তমালকে মনসুর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত শিক্ষার্থী তমাল বগুড়া শহরের ধানসিড়ি নাটাইপাড়ার আব্দুল্লাহ আমিনের ছেলে। ঘটনার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই শিক্ষককে মারপিট ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কলেজে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ প্রায়ই নেশাগ্রস্ত হয়ে পিস্তল এবং অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে আসতো এবং টেবিলে অস্ত্র রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করত। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের মোবাইলে ভিডিও কল দিয়ে হয়রানি করতো। বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ শহরের সরকারি কলেজের নিকটস্থ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়। শিক্ষক স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারতো না। অস্ত্র হাতে ক্লাসে শিক্ষকের এমন ঘটনা কলঙ্কজনক বলে আখ্যায়িত করে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের মেডিকেল সনদ বাতিল, চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। একই সাথে কলেজে শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফ নিজের ইচ্ছে মতো কলেজে আসতো। অস্ত্র নিয়েও আসতো বিষয়টি মুখে মুখে জানার পর তাকে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সে কোনো নোটিশের জবাব দেয়নি। আর স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় সবাই তাকে তটস্থ করে চলত।

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় জরুরি বৈঠক করে শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত, অন্যত্র বদলিসহ বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার পাশাপাশি ক্লাসে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকাল থেকেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানার পরই প্রথমে শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থী, তার বাবা-মা ও কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককের সাথেও কথা বলা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ করা হবে। সুপারিশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র ও মামলার বিষয়গুলো পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান মুরাদ জানান, বর্তমানে আহত শিক্ষার্থী তমালের শারীরিক অবস্থা ভালো ও শঙ্কামুক্ত।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে লাইসেন্সবিহীন ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড তাজাগুলি, ৪টি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি ছোরা, ১০টি বার্মিজ চাকু, দুটি ব্র্যাশ নাকেল, একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। দুটি মামলা ডিবি তদন্ত করছে। দুই মামলায় দুপুর ২টার দিকে ডিবি পুলিশ চিকিৎসক রায়হান শরীফকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আদালতে সোপর্দ করে। বিকেলে ১৬৪ ধারায় চিকিৎসক রায়হান জবানবন্দী দিলে আদালত তা রেকর্ড করেন।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102