
লাইফস্টাইল
মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় টক স্বাদের ফল ও রান্না করা টক তরকারি শুধু স্বাদ বাড়ায় না, বরং শরীরের জন্য বহুগুণে উপকারী। প্রাকৃতিকভাবে এসব টক ফলের মধ্যে থাকে জৈব অ্যাসিড বা “গুড অ্যাসিড”, যা শরীরের হজম, রক্ত পরিশোধন, লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

🍋 প্রাকৃতিক টক ফলে যে গুড অ্যাসিড
লেবু, তেঁতুল, আমলকী, জলপাই, আমড়া, চালতা, আনারস, টমেটো, এমনকি করমচা ও বড়ইয়ে থাকে প্রধানত সাইট্রিক, ম্যালিক, টারটারিক ও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এগুলোকে বিজ্ঞানীরা “গুড অর্গানিক অ্যাসিড” বলেন, কারণ এগুলো শরীরের pH ব্যালান্স বজায় রাখে, টক্সিন দূর করে, ও রক্তের অম্লত্ব (acid-base balance) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

সাইট্রিক ও ম্যালিক অ্যাসিড হজম এনজাইম সক্রিয় করে, পাকস্থলীর রস বাড়ায় এবং ভারী খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা ভিটামিন ‘সি’ হিসেবেই পরিচিত, শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আয়রন শোষণে সহায়তা করে। অন্যদিকে তেঁতুলের টারটারিক অ্যাসিড রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় ও লিভার পরিষ্কার রাখে।

🍲 রান্না করা টক তরকারির পুষ্টিগুণ
বাংলাদেশের ঘরোয়া রান্নায় চালতা, টমেটো, লেবু, আমড়া বা তেঁতুল দিয়ে তৈরি টক তরকারি বা ডাল হজমে অত্যন্ত সহায়ক। রান্নার তাপে কিছুটা অ্যাসিড কমে গেলেও এর উপকারী গুণ নষ্ট হয় না। বরং তরকারিতে ব্যবহৃত সবজি, ডাল ও মাছের প্রোটিনের সঙ্গে মিশে এটি হজমকে আরও সহজ করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, টক তরকারি খেলে পাকস্থলীতে খাদ্য দ্রুত ভাঙে, গ্যাস কমে এবং ক্ষুধা বাড়ে।
এছাড়া এসব টক উপাদান খাবারে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব সৃষ্টি করে, যা দেহের কোষ ক্ষয় কমায় এবং লিভারকে সক্রিয় রাখে। তাই গ্রামীণ খাবারের ঐতিহ্য ‘তেঁতুলের ডাল’ বা ‘চালতা মাছ’ শুধু স্বাদের নয়, বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও উপকারী।

⚖️ শরীরের জন্য কতটুকু “গুড অ্যাসিড” প্রয়োজন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক গড়ে

👉 ২–৩ গ্রাম সাইট্রিক বা ম্যালিক অ্যাসিডের সমতুল্য প্রাকৃতিক টক উপাদান যথেষ্ট।
এটি সহজে পাওয়া যায় দিনে ১–২ পিস লেবুর রস, ১–২টি টক ফল (যেমন আমলকী বা আমড়া) বা একবেলা টক তরকারি খেলে।
তবে অতিরিক্ত টক খাবার পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া, দাঁতের এনামেল ক্ষয় বা কিডনিতে অক্সালেট পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে—বিশেষত বিলিম্বি বা অরবরইয়ের মতো ফল অতিরিক্ত খেলে। তাই পরিমিত পরিমাণই নিরাপদ ও উপকারী।
টক ফল ও টক তরকারি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে “গুড অ্যাসিড” সরবরাহ করে, যা শরীরের ভারসাম্য, হজম ও রোগপ্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাবারে অল্প টক থাকুক—তাতে শুধু স্বাদ নয়, বাড়বে স্বাস্থ্যও।
মমিনুল ইসলাম মোল্লাসাংবাদিক, শিক্ষক ও পুষ্টি বিষয়ক লেখক