জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সদ্য ঘোষণা করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তা অবাঞ্চিতসহ অব্যাহতি নিয়েছে নেতারা।গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল সাক্ষরিত জবিতে ছয় মাসের জন্য সংগঠনটির ৫২ সদস্যের এ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৫ ব্যাচের ছাত্র মাসুদ রানা ও সদস্য সচিব হিসেবে আছেন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সিফাত হাসান। কমিটি অনুমোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পদত্যাগের হিড়িক পড়ে নব্য কমিটির নেতাদের।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করা বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এক তরফা শুধু বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের শিক্ষার্থী নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে পদ পাওয়া সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো. শাহীন মিয়া ও ফেরদৌস হোসেনসহ বেশ কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগ আনা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নূর নবীর বিরুদ্ধেও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের কাছে না শুনেই কমিটিতে নাম দেওয়া হয়েছে ও একজনের ইশারায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। নামে বৈষম্যবিরোধী হলেও জগন্নাথের কমিটিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন অনেকেই এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা হতাশের সুরে বলছে আন্দোলন করলাম আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর এখন পদ পাচ্ছে এক তরফা কিছু লোক। তাদের একক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে বিধায় তারা এভাবে কমিটি করেছে।
পদত্যাগ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন জবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নব্য কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শাহিন মিয়া। তিনি বলেন,‘ জবিতে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি মূলত পদত্যাগ করা সমন্বয়ক নূর নবীর মাই ম্যানদের নিয়ে করা হয়েছে। এখানে কোন ধরনের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয় নাই। এখানে দেখা হয়েছে নূরনবীর অনুগত কিনা। এই ব্যাক্তিগত কমিটি মানিনা এবং প্রত্যাখ্যান করছি।’
কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আবেগের প্লাটফর্ম। জবিতে এই কমিটি গঠন বিষয়ে কিছু না জানিয়ে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমার নাম টাও সঠিক ভাবে লিখতে পারে নাই। ’
ফেরদৌস বলেন, ‘কমিটির জন্য আমরা ৯০ জনের লিস্ট করেছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন ভাবে কাউকে না জানিয়ে হুট করে এ কমিটি দিয়ে দিল। পদ নিয়ে অবজেকশান নাই। এই কমিটিতে যে কয়জন আছে মূলত শিবিরের। নুরনবী ভাই একটা শিবিরের টিমকে সাজিয়েছেন। কবি নজরুল, ঢাকা কলেজের মতো জায়গায় যদি ৩০০জনের কমিটি দিতে পারে। আমাদের ৫২জনের কেন? এখানে যারা বাম, ছাত্র অধিকার কিংবা ছাত্রদল করেছে তাদের কোনো পদ দেওয়া হয় নাই।এভাবে সবাইকে বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগ করেছে। তারা কুমিল্লার এবং একইসঙ্গে নুরনবীর এলাকার এজন্য তারা কমিটিতে আছে। কিন্তু যারা ছাত্রদল করত তাদেরকে বাদ দিয়েছেন। ছাত্রলীগ যদি জায়গা পায়, ছাত্রদল কী দোষ করেছে?’
জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘কমিটিটা এসেছে হাসনাত আবদুল্লাহ আর আরিফ সোহেলের স্বাক্ষরে। এই দায়ভার যদি নিতে হয় তাহলে তারাই নিবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রিক ছিল না। কিন্তু একটি সুসংগঠিত রাজনীতি করতে গেলে সব ধরনের মানুষকে নিয়ে করা যায় না। একটু একমনা লোকদের নিয়ে চালাতে হয়। আমি ফেসবুকে দেখেছি ৩ জন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় এই অভিযোগ তুলেছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। কিন্তু তাদের এই পদটা পছন্দ হয়নি। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চেষ্টা করছে।’
অভিযোগের ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জবি ছাত্র মো. নূর নবী বলেন,‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা আন্দোলন করেছে তারা একজনের মাইম্যান হয়ে তার কথায় উঠবে-বসবে এগুলো বলা অযৌক্তিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা কাজ করেছে তারা দলমত নির্বিশেষে সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদেরকে নিয়েই এই কমিটি গঠন হয়েছে । কয়েকজন তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী পদ পাইনি বিধায় এমন ধরনের কথা বলছে।’