কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবন ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসায়ও ভাঙচুর করে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
পরে সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতা শহরের খরমপট্টি এলাকার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টিটুর বহুতল ভবনের তালা ভেঙে বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা খরমপট্রি এলাকায় কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব সংলগ্ন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়ির গেট ও দরজা ভেঙে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। ঘটনার সময় নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শহরের ঘনবসতিপূর্ণ খরমপট্রি এলাকায় কাছাকাছি চারটি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওই সময় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সময় খড়মপট্টি, উকিলপাড়া, গৌরাঙ্গ বাজার ও স্টেশন রোড এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় ঘণ্টাখানেক বিদ্যুৎ ছিল না। ভাঙচুর করা সাবেক রাষ্ট্রপতির বাসভবনসহ বাকি স্থাপনাগুলো থেকেও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককে। উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ভিডিও করতেও দেখা গেছে।
এ ছাড়া পাকুন্দিয়া পৌরসদর বাজারে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরসহ বাজিতপুর পৌর সদর বাজারের সিনেমা হল মোড়ে শেখ মুজিবসহ সাবেক চার রাষ্ট্রপতির ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় একই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও আলোচিত সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব সরকারের বাড়ি। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
এদিকে, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিন্নাটি মোড়ে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবিসংবলিত ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। ভাঙচুরের ঘটনাটিকে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভারতে থেকে বিভিন্ন বক্তব্য ও ফেব্রুয়ারি মাসে লিফলেট বিতরণসহ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নানা কর্মসূচির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন জানান, ‘হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েও খুনি হাসিনা দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাই কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবনসহ কয়েকটি জায়গায় হামলা–ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’