হাকিকুল ইসলাম খোকন , যুক্তরাষ্ট্র: জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম ( জেএসএফ ) বাংলাদেশ মিডিয়া সেল থেকে বাপসনিউজ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , কথা ছিল আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। কথা ছিল গণঅভ্যুত্থানের অংশীদাররা সরকার চালাবে। আপনারা মাঠে বলছেন ছাত্র-জনতার সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আনা হচ্ছে।
জেএসএফ এর সংগঠক হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন এক বিবৃতিতে বলেছেন, যারা ধানমণ্ডি-৩২কে কা’বা মনে করে তাদেরকে আমরা লালকার্ড দেখাই। এমন কাউকে আমরা উপদেষ্টা প্যানেলে চাই না। এই সরকারে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর আছে তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আঞ্চলিকতার অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপদেষ্টা নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে ইস্যু করা হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগে প্রাধান্য পাচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। ২৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ১৩ জনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিভাগে। এই ১৩ উপদেষ্টার দপ্তর-উপ দপ্তরেও তাদের নিজস্ব এলাকার ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগের রয়েছেন ৭ জন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কেউ উপদেষ্টা পরিষদে নেই। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একজন করে আছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা জেলা থেকে উপদেষ্টা হয়েছেন বেশি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেই এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমন বৈষম্য দূর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।
( জেএসএফ ) বাংলাদেশ মিডিয়া সেল থেকে বাপসনিউজ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , রাজনৈতিক সরকারের সময়েও মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগ ও অঞ্চল বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে সব অঞ্চল ও এলাকার প্রতিনিধিত্ব থাকে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এক্ষেত্রে বড় বৈষম্য তৈরি হয়েছে অঞ্চল বিবেচনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা পরিষদে এই অঞ্চল বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা; অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই! তার উপর খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে!’
ওদিকে রোববার রাতে তিন উপদেষ্টার শপথ নেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঞ্চল বৈষম্য নিরসন দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নূরুল আমীন বেপারী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কথা উঠেছে সরকার এক বিভাগ থেকেই বেশি উপদেষ্টা নিয়েছে। এ কারণে সরকার বেশি সফলতা পাচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে , অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের জন্মস্থানও চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক নিবাসও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। যদিও তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারও চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। একই জেলার যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের অধিবাসী। একই জেলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পৈতৃক বাড়িও চট্টগ্রামে। বিয়ে ও পরিবার সূত্রে তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের বাসিন্দা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়িতে। সর্বশেষ উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া মাহফুজ আলমের বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জন্ম কলকাতায়। কলকাতা কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে পরে তিনি ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার অধিবাসী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও একই জেলার। বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ঢাকা জেলার বাসিন্দা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ঢাকার বাসিন্দা।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশাল বিভাগের একমাত্র উপদেষ্টা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ময়মনসিংহে স্থায়ী। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ঢাকার অধিবাসী। খুলনা বিভাগ থেকে একমাত্র উপদেষ্টা হয়েছেন সেখ বশির উদ্দীন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
জেএসএফ এর সংগঠক হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন বিবৃতিতে বলেছেন,, অন্তর্বর্র্র্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিনের শপথ নেয়ার পরই আলোচনায় এসেছে একটি মামলার নথি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রামপুরা এলাকায় গুলিতে নিহত সোহানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা ওই মামলার এজাহারে নাম আছে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার। আসামির তালিকায় থাকা এই নামের সঙ্গে শপথ নেয়া বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের নাম ও বাবার নামের মিল আছে। মামলার নথি সামনে আসার পর অনেকে প্রশ্ন করছেন, গণহত্যা মামলার এজাহারে নাম থাকা ব্যক্তিকে উপদেষ্টা করা হলো কেন? আর তিনি যদি নির্দোষ হন তালে সেটি স্পষ্ট করা হলো না কেন?
৫৭ জনের নাম পরিচয়সহ ২০০-৩০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি করেছেন নিহত সোহানে মা সুফিয়া বেগম। গত ৭ই অক্টোবর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি হত্যা মামলার আবেদন করেন। সি আর মামলা নম্বর-৯৯। পরবর্তীতে আদালত সেটাকে আমলে নিয়ে রামপুরা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় রামপুরা থানা পুলিশ গত ১৯শে অক্টোবর মামলা এজাহারভুক্ত করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। মামলা নম্বর-১৮।
ওদিকে গত রোববার নতুন ৩ উপদেষ্টার শপথ গ্রহণের দিন বঙ্গভবনের বাইরে এই উপদেষ্টাদের কাউকে কাউকে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন কিছু মানুষ। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তার বাবা শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বনানী থানা এলাকায় বসবাস করছেন।
মামলায় শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে তার ভাই শেখ আফিল উদ্দিনকেও আসামি করা হয়েছে। আফিল উদ্দিন যশোর-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি। মামলার বিষয়ে রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, মামলায় দুই ভাইয়ের নামই আছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে যদি তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে , ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ এবং এতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদদের রক্তের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কার প্রেসক্রিপশনে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নও তুলেছেন নেতারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌথ আয়োজনে বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পদ থেকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দালালি করা ব্যক্তিরাও ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে, যেটি অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হলো- তা স্পষ্ট করার আহ্বানও জানান তারা। বিক্ষোভে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ারও সমালোচনা করা হয়।
শিক্ষার্থীরা মুজিববাদ এবং আওয়ামী দোসরদের তাড়াতে ব্যস্ত। অন্যদিকে তখন আমরা খবর পাই ধানমণ্ডি-৩২কে যারা কা’বা মনে করে তাদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আপনারা যদি মনে করেন ছাত্র-জনতার রক্তকে পুঁজি করে উপদেষ্টা হবেন, তাহলে ভুল বুঝছেন।