ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসন সংখ্যা ৫০-এর বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ১২৩ জন। শিশু রোগী ৭০ জন, পুরুষ ১৩ জন ও মহিলা রোগী ভর্তি আছেন ৪০ জন। শিশুরা বেশির ভাগ নিউমোনিয়া ও পেটের অসুখে আক্রান্ত। আসন না পেয়ে তারা থাকছেন বারান্দায়। মশা-মাছির উপদ্রব ও বৃষ্টির সময় বাহির থেকে আসা ধূলায় তারা আরও কাবু হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও হাসপাতালের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে কচু গাছের আগাছা, ঝোপঝাড় ও অদূরেই রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে ড্রেন, টয়লেট ও অন্যান্য আশপাশের জায়গাগুলো নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। ফলে হাসপাতাল এলাকায় বিরাজ করছে এক ধরনের নোংরা পরিবেশ।
এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা ভালো দেওয়া হয় এমন প্রচার থাকায় ফুলপুর তো বটেই হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও নকলাসহ আশপাশের বহু জায়গা থেকে এখানে রোগী নিয়ে আসা হয় কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক-জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, এসব রোগীকে সামাল দিতে ১৩ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে আছেন মাত্র ৫ জন। কনসালট্যান্ট ১১ জনের মধ্যে ৭ জন, নার্স ৩৪ জনের মধ্যে ২৯ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী যেখানে ১০ জনের প্রয়োজন সেখানে আছেন মাত্র ১ জন। রহিমগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বলতে গেলে নিজেই অসুস্থ। বহু বছর ধরে এতে নেই কোন ডাক্তার।
জানা গেছে, এসএসিএমও সাব্বির হোসেনকে দিয়ে কোনোমতে চলছে। এখানে ডা. আসাদুজ্জামান নামে একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি অনেক আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে প্রেষণে চলে গেছেন। বর্তমানে কোথায় আছেন জানা যায়নি। এছাড়া ১০টি ইউনিয়নে ১০টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে ৩৮টি কমিউনিটি হাসপাতাল। এগুলোর অবস্থাও ভাল না। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই বেশ কয়েকটি হাসপাতালে। কোন কোন জায়গায় স্থাপনা নেই। ফলে ডাক্তাররা বসতে পারেন না। সম্প্রতি টানা বর্ষণে ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া ও পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এতসব রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ যে, ফুলপুর হাসপাতালে এখন চিকিৎসা নেই। এখানে রোগী নিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু হতে না হতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। এতে গরিব অসহায় রোগীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। শহরে গিয়ে নানা ধরনের টেস্টের বোঝা মাথায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত টাকা তাদের অনেকেরই নেই। যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল এসব হাসপাতাল তা ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তিতপুর গ্রামের মাসুদ রানার ৭ মাস বয়সী পেটের অসুখে আক্রান্ত শিশু আইমানকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তার মা। নার্স আপুটি লাউয়ারি থেকে আসা একটি শিশুকে দেখছিলেন তখন। আইমানের মায়ের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীট না পেয়ে তিনি রাত কাটাচ্ছেন বারান্দায়। কষ্টে ঘুমাতে পারছিলেন না বলেও জানান তিনি। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ফুলপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন হালুয়াঘাটের স্বদেশী ইউনিয়নের ইটাখলা গ্রামের জহিরুল খানের শিশুপুত্র জিহাদ (৮) ও ফুলপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মেহেদী হাসান রনির শিশু পুত্র হিজবুল্লাহ। তারাও কেউ সীট পাননি। পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবাও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের জনবলে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত সেবাটা আমরা রোগীদের দিতে পারছি না। তবে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আসন সংখ্যা ও জনবল অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলে আশা করি এ দুর্ভোগ থাকবে না।