লতিফুর রহমান রাজু,সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জে যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (তিন অক্টোবর) বেলা দশটায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর উদ্যোগে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর সার্বিক সহযোগিতায় শহরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের হলরুমে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিডির ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির ফেলো ও কোর গ্রুপ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান,ইউরোপীয় ইউনিয়নের সসহকারি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (শিক্ষা) জুই চাকমা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, সুনামগঞ্জ সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আজিজুল শিকদার, বিসিক এর উপ-ব্যবস্থাপক এম এন আসিফ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাসক ইভা রায়, গবেষক নয়ন প্রমুখ।
সিপিডি সংলাপে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। শুরুতেই বাংলাদেশে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরেন তিনি। সংলাপে জেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা,শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। এরপর উন্মুক্ত আলোচনায় মতামত দেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা সুনামগঞ্জের কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা, দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণের অভাব, অভিভাবকদের অসচেতনতা, প্রচার প্রচারণার অভাব, আন্তরিকতার ঘাটতি, উদ্যোক্তাদের পুঁজির অভাব, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, শিক্ষার আধুনিকায়নের অভাব, বাজেটে বরাদ্দ কম দেয়াসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ব তুলে ধরেন।
পরে কারিগরি শিক্ষাকে একটি অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে সরকারিভাবে কার্যকর স্বীকৃতি দেয়া, স্বল্প মেয়াদী কোর্সের চাইতে দীর্ঘমেয়াদি এবং কর্ম চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সের উপর জোর দেয়া, দক্ষ জনবল নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষার উপর জোর দেয়া, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ ও পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে সুনামগঞ্জে একটি পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, জেলার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পর্যটন, মৎস্য চাষসহ কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়াসহ চাকরিতে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে দক্ষ জনশক্তিকে সম্পদে পরিণত করা যাবে বলে মতামত দেন তারা।
সিপিডির ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমরা যদি মনে করি সরকার আমাদের সব করে দেবে তাহলে আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি। আগামী দিনে দেশের সম্পদকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে আমাদের কাঙ্খিত অবস্থানে যেতে হবে। আমাদের দেশ একটা বিশেষ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য সুবর্ন সুযোগ। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে কি করতে পারে তা তিন মাস এগিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কাজেই আগামী দিনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এ বিষয় নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।