অনলাইন ডেস্ক:
গণঅভ্যুত্থানের পর অধিকার ও মুক্তি অর্জনের কাজ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার যেন কোনো কোটারি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে- তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সরকারের ব্যর্থ বা বিতর্কিত হওয়ার অবকাশ নেই। গণঅভ্যুত্থানের বার্তা হচ্ছে— দুর্বৃত্ত মাফিয়া দখলদারিত্বের রাজনীতিকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহিদ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতীয় নেতারা এ কথা বলেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে বুধবার ‘রক্তেভেজা গণঅভ্যুত্থান-গণআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে অস্পষ্টতার পাশাপাশি সমন্বয়হীনতাও দেখা যাচ্ছে, আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে আবার বিশেষ কোনো স্বার্থান্বেষীদের কাছে কোনোভাবে জিম্মি না হয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনে যে অস্থিরতা চলছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নানা উসকানি, অনৈতিক চাপ ও প্রভাব মোকাবেলা করে তার নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি আশু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের পাশাপাশি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতেও সরকারের প্রতি আহবান জানান।
তিনি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখে এটাকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এন্টিবায়োটিক ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি আশা করেন, জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থান একদিনে সংঘটিত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণের বহু বছরের মরণপণ লড়াই। এবারের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম ষোলো বছর ও ছত্রিশ দিনের। হঠাৎ কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়নি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক সোহরাব হাসান বলেন, অতীতে কয়েকবার স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি। জনগণের মুক্তি হয়নি। এবার সবাইকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভদ্রোচিত অনেকগুলো কমিশন হয়েছে, কিন্তু শ্রমজীবী মেহনতিদের অধিকার নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক-লেখক সোহরাব হাসান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল হাকিম, এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি আবদুন নূর, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। সভা পরিচালনা করেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান ও আবু হাসান টিপু।
সাধারণ সভার শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহিদ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফসহ হাজারও শহিদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।