April 28, 2024, 8:02 pm
ব্রেকিং নিউজ

শংকায় হাওর পাড়ের কৃষকরা

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Sunday, March 3, 2024
  • 51 দেখা হয়েছে

লতিফুর রহমান রাজু.সুনামগঞ্জ:

হাওড়ে বাঁধের কাজ শেষ করার সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। কাগজে কলমে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হলেও বাস্তবে রয়েছে ভিন্নতা। এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওড়পাড়ের কৃষকরা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, হাওড় রক্ষা বাঁধের প্রায় ৮৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও সাতদিন সময় লাগবে। তবে স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন ৪০ শতাংশ হাওড় রক্ষা বাঁধের কাজ করতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।

কারণ হাওড় রক্ষাবাঁধের কাজে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য ধীরগতিতে কাজ করছে প্রকল্পের লোকেরা। শুরু থেকেই হাওড় রক্ষাবাঁধের কাজে নানা র্দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও কর্ণপাত করেনি পাউবোর কর্মকর্তারা। এমনকি নীতিমালার বাহিরে গিয়েও কৃষক ছাড়াই অনেক কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি।

উপজেলা হাওড় রক্ষা বাঁধের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক ও প্রকল্প কমিটির কৃষক প্রতিনিধি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। তিনি বিভিন্ন অনিয়মের কথা অভিযোগে তুলে ধরেন। আর এসব পিআইসিতেই এখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওড় উপ-প্রকল্পের ৮৫,৮৬,৮৭,৮৮,৮৯,৯০,৯১,৯২,৯৩,৯৪ ও ৯৫নং পিআইসিতে পুরনো বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু পিআইসিতে এখনো মাটি ফেলা হয়নি, সামান্য মাটি দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে।
তবে সঠিক সময়ে বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন হাওড়পাড়ের কৃষকরা। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে বাঁধের মাটি ধসে পড়বে। আবার তা সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় ফসল তলিয়ে যাবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অসময়ের বৃষ্টিকে দায়ী করছে পাউবো। তবে তাদের এমন অজুহাতকে গা বাঁচানোর চেষ্টা বলছে হাওড় বাঁচাও আন্দোলন। বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

পাউবোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলার হাওড়ে এবার পাউবো ও প্রশাসন ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের কাজ করছে। এজন্য ৭৩৫টি প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের সদর, শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও শাল্লা উপজেলার হাওড় এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢিলেঢালাভাবে করা হচ্ছে কাজ। অনেক বাঁধে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ বাঁধে লাগানো হয়নি দূর্বা ঘাস।

শাল্লা উপজেলার কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, এবারের বাঁধের কাজ অন্যবারের তুলনায় খুব বাজেভাবে করা হচ্ছে। এ রকম যদি কাজ করা হয় তবে একদিনের বৃষ্টিতেই বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাবে তাদের। ছায়ার হাওড়ের কৃষক রণ দাস বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে এই বাঁধের কাজ শেষ না করা গেলে এই হাওড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি অরক্ষিত থাকবে। দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।

বাঁধের কাজকে কৃষকের সঙ্গে মশকরা আখ্যায়িত করে হাওড় বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, পাউবো কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে, তারা সময় বাড়াতে চাইছে বাড়াক, তবুও যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করতে পারিনি। আর সাতদিন সময় বাড়ালে শেষ করে ফেলতে পারব। এ জন্য আমরা আবেদন করব।

জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন বাঁধের কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। সে জন্য সময়মতো শেষ হয়নি। তবে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলব। অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্হা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102