সম্পাদকীয়
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। শনিবার যুগান্তরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; মারা গেছে ২২৯ জন। রোগীর চাপ সামলাতে রাজধানীর হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ২০ জুলাই পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন; মারা গেছেন একজন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কী করে সফল হলো তা আমাদের জানা দরকার এবং তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কলকাতায় প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ১৮২৪ সালে। এরপর সেখানে ডেঙ্গু কয়েকবার মহামারির আকার ধারণ করেছিল। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে কলকাতার। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশের মানুষ। বস্তুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অতি বর্ষণজনিত কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুসংক্রান্ত আমাদের বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত না থাকায় পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এডিস মশা নিধনে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা বারবার আলোচনায় আসছে। দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে কেবল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর জীবাণু ও এর বাহক এডিস মশার শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এদিকে উপর্যুপরি রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস বহনকারী মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। অর্থাৎ, রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মশা ও ভাইরাস দুটিকেই বেপরোয়া করে তুলেছে। এ অবস্থায় এডিস নির্মূলে গতানুগতিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এডিস মশা বারবার তার আচরণ পরিবর্তন করে। ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আসতে আরও কয়েক বছর লাগবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এডিস নির্র্মূলে বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু যেহেতু কীটবাহিত রোগ সেহেতু এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে রোগ ও কীট দুটোকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কাজেই যারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন সেই দলে যদি কীটতত্ত্ববিদসহ অন্যান্য কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ না থাকেন তাহলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখে দিতে পারে। এক সময় ডেঙ্গু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ ছিল, এখন যা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেহেতু এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেহেতু এখন এডিস নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।