সম্প্রতি জাপান থেকে ২০০ কোটিরও বেশি টাকা দামের প্রাডো, হ্যারিয়ার, প্রিমিও, এলিয়নসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৭৬৯টি গাড়ি আমদানির ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ২১৯টি এবং মোংলা বন্দরে ৫৫০টি গাড়ি খালাস করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়মে আইজিএমে রপ্তানিকারক, আমদানিকারক ও ব্যাংকের নাম থাকলেও এসব গাড়ির আইজিএমে শুধু আমদানিকারকের নাম রয়েছে।
আশ্চর্যজনক হলো, নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি খোলার পর তবেই রপ্তানিকারক সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ করেন। গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও এতদিন একই নীতি পরিপালিত হলেও এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে-প্রচলিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের এলসি ছাড়াই বাংলাদেশি আমদানিকারকের কাছে জাপানের রপ্তানিকারকরা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এভাবে একসঙ্গে এতগুলো গাড়ি আমদানির ঘটনা যে নজিরবিহীন, তা বলাই বাহুল্য। অভিযোগ উঠেছে, সুপরিকল্পিতভাবে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করতেই সিন্ডিকেট গঠন করে এ কারসাজি করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে হুন্ডি করে টাকা পাঠানো হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার গুরুতর অপরাধ। এজন্য শাস্তির বিধান রেখে আইনও করা হয়েছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না কেন, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।
আয়কর প্রদান নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাচীনকাল থেকেই নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা চলে আসছে। কর হিসাবে প্রদানকৃত অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয়, যা সর্বজনবিদিত। ব্যবসায়ীরা যে প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে নন-এ বিষয়ে কেউ নিশ্চয়ই দ্বিমত পোষণ করবেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাপান থেকে গাড়ি আমদানির প্রক্রিয়া বিধিবদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হওয়াটা জরুরি ছিল। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, এক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে, যা দেখার দায়িত্ব মূলত সরকারের। ভুলে গেলে চলবে না, জাতীয় বাজেট প্রণীত হয় মূলত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা না গেলে সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক এবং এর ফলে বাজেট বাস্তবায়নের ভারসাম্য রক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অভ্যন্তরীণ আয় কমে গেলে ব্যয় কাটছাঁট করতে হয়, ফলে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়। এতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেমন নষ্ট হয়, তেমনই জনদুর্ভোগের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়, যা মোটেই কাম্য নয়।