মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, লন্ডন (যুক্তরাজ্য) থেকে
ইংল্যান্ডে ১৩তম লন্ডন বাংলা বইমেলা ১৫ অক্টোবর শুরু হবে। এক যুগের সফল ধারাবাহিকতায় এবার আরও ব্যাপক পরিসরে লন্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিলেতের বাংলা ভাষাভাষী লেখক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ বইপ্রেমীদের প্রাণের এই মেলা তথা উৎসব হবে তিন দিনব্যাপী।
১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে আয়োজিত এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লন্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ছড়াকার দিলু নাসের।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেলা উদযাপন পর্ষদের প্রধান সমন্বয়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মেলা উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক কবি মাশূক ইবনে আনিস, সঙ্গীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, কবি শামীম শাহান ও কবি হাফসা নূর।
সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার আয়োজকরা জানান, ১৫ থেকে ১৬ অক্টোবর মেলা বসবে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে এবং ১৭ অক্টোবর হবে বিপুলসংখ্যক বাঙালি অধ্যুষিত ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি বার্মিংহামে। পুরো বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে সফল ও উৎসবমুখর করে তুলতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি কামনা করেন আয়োজক কমিটি।
এ উৎসবে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতা অনুষ্ঠিতব্য এবারের বইমেলা ও সাংস্কৃতি উৎসবে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকার পাশাপাশি অনেক বাংলাদেশি প্রকাশনা সংস্থা তাদের প্রকাশিত বিপুলসংখ্যক বই নিয়ে মেলায় অংশ নেবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এছাড়া সাংস্কৃতিক উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ, গান এবং শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
বিশেষ করে উৎসব মাতিয়ে রাখতে আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন সঙ্গীত ভুবনের অন্যতম প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত কণ্ঠ মৌসুমী ভৌমিক এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ।
অতিথিদের তালিকায় আরও আছেন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম খালিদ এমপি, সাবেক মুখ্যসচিব কবি কামাল চৌধুরী, লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দা মুনা তাসনিম, বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে আলোকিত করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বক্তারা বলেন, এধরনের বইমেলা ও উৎসব নিজেদের সাংস্কৃতিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে।
তৃতীয় বাংলা খ্যাত বিলেতে এখন আর বাংলা বইয়ের দোকান নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, বেশি বেশি বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমেই বইপ্রেমীদের কাঙ্ক্ষিত বইটি পাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাগত বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে ২০১০ সালে লন্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা পেশার বাঙালিরা এসব উৎসবের আয়োজক ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল থেকে লন্ডন বাংলা বইমেলা নামে নতুন রূপে এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেলার সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি, বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন।
দুই দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি এবং সময়-ক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, প্রথম দিন ১৫ অক্টোবর, শনিবার মেলা শুরু হবে দুপুর ২টায় এবং এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বিকালে। উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নেবেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকসহ বিলেতের খ্যাতনামা শিল্পীরা। ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
দ্বিতীয় দিন ১৬ অক্টোবর মেলা শুরু হবে দুপুর ১২টায় এবং উন্মুক্ত থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ওই দিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, তাল-তরঙ্গ এবং অংশ নেবেন স্থানীয় বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীরা। সাহিত্য সংগঠন গ্রন্থী, শিকড় এবং আবৃত্তি সংগঠন বর্ণনের পরিবেশনায় থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
এছাড়া রোববার দিনব্যাপী আলোচনাসহ স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের পরিবেশনা থাকবে।