দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টকে স্বর্ণ পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় পাসপোর্ট যাত্রী ও আমদানি পণ্য খালাস করা ভারতীয় ট্রাকে প্রতিদিনই পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ। সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে ৬ কেজি স্বর্ণ।
এ বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা বলছেন, স্ক্যানার মেশিন না থাকায় পাচারকারীরা এ সুযোগ নিচ্ছে।
প্রতিদিন হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে শত শত পাসপোর্ট যাত্রী বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করছেন। এ ছাড়া প্রায় ২০০ ভারতীয় ট্রাক আমদানি করা পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশি ট্রাক রপ্তানি করা পণ্য নিয়ে যাচ্ছে ভারতে। কিন্তু চেকপোস্টে নেই কোনো স্ক্যানার মেশিন। ফলে পাসপোর্ট যাত্রীদের লাগেজ চেকিংয়ের ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার যেমন হচ্ছে, তেমনি ভারত থেকে আমদানিপণ্য নিয়ে আসা খালাসকৃত ফিরতি ট্রাকে এবং ভারতে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকেও পাচার হচ্ছে কেজি কেজি স্বর্ণ। আর এসব কারণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুই দেশের স্বর্ণ পাচারকারীরা।
সূত্র বলছে, স্বর্ণ পাচারকারীরা বগুড়া ও ঢাকা থেকে বাসে, প্রাইভেটকারে এবং মোটরসাইকেলে স্বর্ণ নিয়ে আসছে হিলিতে। এর পর সুযোগ বুঝে হিলি সীমান্তসহ চেকপোস্ট দিয়ে পাচার করছে স্বর্ণ। তারা আকাশপথের পাশাপাশি এখন ভারতে স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে হিলি চেকপোস্টকে। পাচার হওয়া এসব স্বর্ণ চলে যাচ্ছে ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে। ইতোমধ্যে এই চক্রের কয়েকজন সদস্যকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণসহ আটক করে হিলি কাস্টমস গোয়েন্দা। এ সময় তারা দুই কোটি টাকা মূল্যের ২৪টি সোনার বারসহ আটক করে বাংলাদেশি পাঁচজন পাসপোর্ট যাত্রীকে। এর আগে কয়েকজন বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী কাস্টমস, বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে ভারতের কাস্টমসের হাতে তিন কেজি স্বর্ণ নিয়ে আটক হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ পথ ব্যবহার করে ভারেত স্বর্ণ পাচার করে আসছে এ চক্রের সদস্যরা।
স্বর্ণ পাচারকারীরা বলছেন, ঢাকার চকবাজার, তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসব স্বর্ণ পাচার করে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের কলকাতার বড় বাজার ও নিউমার্কেটে। সেখানকার দোকানে বিক্রি করা হয় এসব স্বর্ণ। প্রতিটি ১০ গ্রাম সোনার বারে তাদের লাভ হয় তিন হাজার টাকা।
সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতে সোনা পাচার হচ্ছে। এটি কিভাবে সম্ভব। প্রশাসন কঠোর নজরদারি না করার কারণে চোরকারবারিরা খুব সহজেই হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে সোনা পাচার করতে পারছে। হিলি যেন এখন সোনা পাচারের প্রধান রুট তাদের কাছে।
হিলি ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করলেও যাত্রীদের লাগেজ বা দেহতল্লাশিতে কোনো স্ক্যানার মেশিন নেই। ফলে এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন স্বর্ণ চোরাকারবারিরা।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, ব্যাগেজ শাখায় পাসপোর্ট যাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা দরকার। এখানে সেটি নেই। আবার স্ক্যানার মেশিন না থাকায় পাচারের সুযোগ থাকে।
হিলি কাস্টমস গোয়েন্দা শোয়েব রায়হান বলেন, সম্প্রতি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পাচারের সময় উদ্ধার করা হয় দুই কোটি টাকা মূল্যের ২৪টি স্বর্ণের বার। ভারতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশী পাঁচযাত্রীর দেহ তল্লাশী করে এসব স্বর্ণ জব্দ করে হিলি কাস্টমস গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয় পাঁচজন পাচারকারীকে।