অনলাইন ডেস্ক:
তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপারসন হওয়ার পর হঠাৎ করেই সিলেটের রাজনীতিতে ফ্রন্টলাইনে শমসের মবিন চৌধুরী। আলোচনায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুরও। দুই ভিআইপি। দেশজুড়ে পরিচিত মুখ। দু’জনেরই চোখ আছে সিলেটের দিকে। এই সরকারের প্রথম টার্মের সময় সিলেট-১ আসনের স্বপ্ন বুনেছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। বিএনপি’র সহ-সভাপতি ছিলেন। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপি’র হাল ধরেছিলেন তিনি। ছিলেন সিলেট বিএনপি’র অভিভাবকও। পরে বিএনপি ছেড়ে অন্য পথ ধরেন।
তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পান খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার পিতা খন্দকার আব্দুল মালিক সিলেট বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এখন খন্দকার মুক্তাদিরের হাত ধরেই চলছে সিলেট বিএনপি। শমসের মবিন চৌধুরী দল ছাড়ার পর এ আসনে তাকে নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হতে হতেও হননি।
এবার তৃণমূল বিএনপি’র শীর্ষ নেতা হওয়ার পর শমসের মবিনকে নিয়ে ফের আলোচনা সিলেটে। সিলেট-১ ও সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে তার নাম আলোচনায় এসেছে। তবে এখনো শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তিনি দুই আসনের মধ্যে একটিতে প্রার্থী হতে পারেন- এমন গুঞ্জন চলছে সিলেটের রাজনীতিতে এবং জোটবদ্ধ ভোটে তার জয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন রাজনৈতিক নেতারা। সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের এক সময়ের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের নাম। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের একটি বলয় তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। এর ব্যাখ্যা তুলে ধরে তারা জানান, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর এক সময় সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা ছিলেন। এ কারণে সিলেট সদরে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। একইসঙ্গে সিলেট আওয়ামী লীগের বর্তমান অনেক নেতা তার হাত ধরেই ছাত্র রাজনীতিতে এসেছিলেন। ফলে অবস্থানগত দিক দিয়ে সুলতান মনসুরও সিলেটের রাজনীতির জন্য বড় ফ্যাক্টর।
গত দুই দশকে সিলেটের রাজনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নতুন নেতারা এসেছেন ফ্রন্টলাইনে। এক্ষেত্রে পুরাতন নেতারা এখনো শূন্যতার ভেতরেই হাবুডুবু খাচ্ছেন। এজন্য সিলেট সদরের মর্যাদাপূর্ণ এ আসনের হিসাব-নিকাষে সুলতান মুহাম্মদ মনসুর নতুন করে খোরাকের জন্ম দিয়েছেন। এ আসনে বর্তমান এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। অন্যদিকে সিলেট জেলার ৬টি আসনের এবার জাতীয় পার্টি নতুন করে হিসাব শুরু করেছে। দুটি আসন চায় দলটির নেতারা। এ জেলায় জাতীয় পার্টিকে বিগত দিনের নির্বাচনে দুটি আসন দেয়া হয়েছিল। সিলেট-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগে থেকেই লবিং শুরু করেছেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাকে প্রার্থী দিতে এবার যুক্তরাজ্য থেকে বেশি আওয়াজ উঠছে। এবার জোটগত নির্বাচনে সিলেট-৩ ও সিলেট-৫ আসনের বাইরে দুটি আসন দাবি জাপার। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারাও জাতীয় পার্টির এই হিসাবের সঙ্গে একমতও। সিলেট-২ আসনটি বিগত দুই টার্ম ধরে ছাড় দেয়া হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। এরমধ্যে এক টার্ম জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ আসনে জয়লাভ করে। গত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এজন্য এ আসনে এবার নৌকার প্রার্থী চাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। সিলেট-২ আসনের পরিবর্তে এবার জাতীয় পার্টি সিলেট-৩ আসন নিয়ে জোরেশোরে লবিং চালাচ্ছে। এ আসনে তাদের প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। এ আসনে এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন গত দেড় বছর আগে উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি। এ দেড় বছরে তিনি এলাকায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন।
সিলেট-৫ আসন একবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হয়। এবার জাতীয় পার্টি এ আসনের পরিবর্তে ৪ অথবা ৬ আসনটি চায়। সিলেট-৪ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে রওশনপন্থি নেতা মুজিবুর রহমান ডালিম রয়েছেন। আর সিলেট-৬ আসনে সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন। ফলে এ দুটি আসনের মধ্যে যেকোনো একটি ভাগবাটোয়ারা গেলে কপাল পুড়তে পারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ কিংবা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের। তবে এ দুটি আসন আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে নারাজ বলে নেতারা জানিয়েছেন। আর সিলেট-৫ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের পক্ষে ভেতরে ভেতরে একাট্টা রয়েছে। ফলে সিলেটে ভোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ সহ শরিক দলের ভেতরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র-মানবজমিন