আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় ছাগল-ভেড়ার বিনামূল্যে ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতি পিপিআর রোগ প্রতিরোধে টিকাদান ক্যাম্পেইনের
কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পিপিআর ছাগলের একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ছাগলের মৃত্যুহার শতকরা ৫০-৮০ ভাগ। কিন্তু নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতিতে টিকা প্রদানে এ রোগ থেকে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ মুক্ত থাকা যায়। প্রাণি স্বাস্থ্যের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (OIE) ২০৩০ সালের মধ্যে সকল দেশকে পিপিআর মুক্তকরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলার অন্যান্য উপজেলার ন্যায় সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল এর আওতায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পিপিআর রোগের ফ্রি ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে।
এ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহেল কাফি জানান, পিপিআর রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে, আক্রান্ত ছাগলের অরুচি ও জ্বর থাকে যা ১০৭-১০৮ ডিগ্রী ফাঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মুখের ভিতর মাড়ী ও জিহ্ববায় ঘা হয় এবং জিরার গোড়া ফুলে যায়। ছাগল ঝিম ধরে পিট বাঁকা ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয় যা শরীর ও লেজে লেগে থাকে। নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৭-১০ দিনের মধ্যে ছাগলের মৃত্যু ঘটে।
পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগলের মুখে যা
পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল যেহেতু এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ এ রোগের তেমন কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হলে আক্রান্ত ছাগলের মৃত্যুহার কমানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে (১) ব্রড স্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিক যেমন-অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি। (২) পাতলা পায়খানার জন্য সালফোনামাইড বোলাস এবং স্যালাইন দিতে হবে। (৩) এন্টিহিস্টামিনিক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, পিপিআর রোগনির্মূল ও প্রতিরোধে নিয়মিত পিপিআর রোগের টিকা প্রদানই পিপিআর রোগ থেকে মুক্ত থাকা ও রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। ছাগলের বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই প্রথম পিপিআর টিকা দেওয়া আবশ্যক। একবার টিকা প্রদান করলে ৩/৪ বছর পর্যন্ত ছাগল ভেড়াতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। প্রথমবার টিকা প্রদানের এক বছর পর বুষ্টার টিকা (২য় বার) প্রদান করলে ছাগল ভেড়াতে সারা জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে। যেহেতু এ রোগের কোন ভাল চিকিৎসা নেই সেহেতু ছাগল ভেড়া পালনকারীকে তার ছাগল ভেড়াকে অবশ্যই জীবনে দুইবার এই টিকা প্রদান করতে হবে।