সীমান্তের শুস্ক হাহাকার পাহাড়ি মাটি, আর পানি স্বল্পতা এবং নানা প্রতিকুলতার কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকেরা তেমন সবজি চাষে আগ্রহী ছিল না। ফলে দীর্ঘ সময় কৃষকের অনাগ্রহ আর অসামর্থতায় কারণে শেরপুর সীমান্তের পাহাড়ি এসব অঞ্চলে সবজি উৎপাদনে কৃষকেরা অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে কয়েক বছর ধরে নানা প্রতিকুলতাকে চ্যালেঞ্জ করে ঘুরে দাড়ানো কৃষকের আপ্রান চেষ্টায় বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকেরা বরবটিসহ সবজি উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেছে। নানা ধরনের উৎপাদিত সবজির মধ্যে অন্যতম বরবটি সবজি এখন শেরপুর ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
বিশেষ করে শেরপুর সীমান্তের পাহাড়ি উপজেলা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবর্দিতে কৃষকেরা এই বরবটি সবজি চাষ করছে। এই বরবটি লাগানো থেকে ফলন বা উৎপাদনের সময় পর্যন্ত মাত্র ৪ মাস সময়ের মধ্যে বরবটি কৃষক বিক্রি করতে পারে। কৃষকের অল্প বিনিয়োগে এসব অঞ্চলের সবজি রপ্তানি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে জানা গেছে, কৃষকের হাতের নাগালে এই সবজি ক্রয়ের দোকান। এলাকার কৃষকেরা তাদের নিজস্ব টাল হতে বরবটি তুলে নিয়ে সরাসরি সেই দোকানে নিয়ে বিক্রি করে মালিকের নিকট নিজ হাতে মেপে দিয়ে দাম সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিতে পারছে। পন্য দিয়ে নগদ টাকায় কৃষকের মূল্য পরিশোধ করায় অল্প সময়ে সে এই সবজি বিক্রি করে কৃষক তার নিজ কাজে ফিরে যেতে পারছে অনায়াসে।
যে কারণে এই অঞ্চলের কৃষকের এখন বরবটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তারা এখন নিজেরা এই সবজি চাষ করে এবং তা উৎপাদনে মনযোগি ও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি উপজেলা নালিতাবাড়ী হতে ১কিঃমিঃ পশ্চিমে পাহাড়ি রাস্তার ধারে ঝিনাইগাতি উপজেলার সন্ধ্যাকুড়া কদমতলী বাজার নামক স্থানে কৃষকের নিকট হতে সরাসরি বেসরকারীভাবে পাইকারি দামে এসব সবজি কিনছেন নজরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন সবজি কারবারি। তারা এসব সবজি কিনে ঢাকাসহ সারা দেশে এই স্থানীয় বরবটি সবজি রপ্তানি করে থাকেন।
বরবটি চাষি কৃষক ফজলুর রহমান (৪৮) বলেন, আমি সন্ধাকুড়ায় ৫ কাঠা জমিতে বরবটি চাষ করেছি। আড়াই তিন মাসে বরববটি ফলনে প্রায় দেড় লাখ টাকা বিক্রি নেমেছে। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আমি এই বরববটি টাল হতে তুলে এনে সরাসরি এই দোকানে মিটার দেওয়া আছে, সেই মিটারে তুলে ওজন পরিমাপ করে নগদ টাকা বুঝে নিয়ে চলে যেতে পারছি। আমার অল্প সময়ে কাজ সেরে বাড়ি গিয়ে অন্য কাজ করতে পারছি। বর্তমানে ভাল মানের বরবটি ১৬শ টাকা মন দরে বিক্রি করছি। একটু নি¤œ মানের টা ১৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বরবটি চাষি নবী হোসেন (৫০) বলেন, আমি ৪ কাঠা জমিতে বরবটি চাষ করেছি। আমার একলাখ টাকার উপড়ে বিক্রি নেমেছে। আমি ১৪শ টাকা মন দরে বরবটি বিক্রি করেছি। আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। বরবটি দোকান মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন দিনে রাতে সবসময় কৃষকের নিকট হতে সরাসরি এই বরবটি সবজি ক্রয় করি। বিশেষ করে তিন মাসের ব্যবসা এটা। প্রতিদিন এক ট্রাক কিংবা কোন দিন চাহিদামত দুই তিন ট্রাক এই বরবটি ক্রয় করে এটিকে বাছাই ও ওজন পরিমাপ, বাজারজাত করে প্যাকেট বা বাক্স করে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকাসহ সারা দেশে রপ্তানি করে থাকি। আমার এই সবজি প্যাকেটজাত করতে প্রতিদিন দিন মজুরী ভিত্তিক কর্মী খাটিয়ে এসব কাজ সম্পাদন করে থাকি। এখানে এই এলাকার অনেক শ্রমিক আমার এখানে দিন মজুরী ভিত্তিক কাজ করে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রাসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাশ বলেন, আমরা কৃষি বিভাগ বরবটি চাষে আগ্রহ বাড়াতে চাষিদের কৃষকদের কৃষি প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি। সীমান্তের এসব অঞ্চলে কৃষকেরা এখন প্রচুর পরিমানে বরবটি সবজি চাষ করছে। তারা বরবটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাজারজাত করনে মার্কেটিংয়ে সরাসরি কাজ করি না। এজন্য কৃষি বিভাগের আওতায় হটেক্স ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা আছে। তারা এই কাজটি করে থাকে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা মন্ত্রানালয়ে আগামীতে প্রস্তাবনা পাঠাব। যাতে সরকারি ভাবে কৃষক তার উৎপদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য ও ওজন পেতে বরবটিসহ অন্যান্য সবজি সরাসরি বিক্রি করতে পারে।