শেরপুরের দশআনি নদীতে সেতু নির্মিত না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চার গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। একটি নৌকা হচ্ছে তাদের নদী পারাপারের মাধ্যম। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে ওই একটি নৌকা দিয়েই পার হতে হচ্ছে নদী।
জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে কামারের চর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী নদী। বিগত ২০ বছর আগে নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু থাকলেও বন্যায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে পার্শ্ববর্তী জেলার জামালপুরের ৪নং চর, ডিগ্রীর চর, আখ্রাবাদসহ চার গ্রামের ২০ হাজার মানুষের ওই নদী পারাপারের মাধ্যম একটি নৌকা। দীর্ঘদিনে একটি সেতু নির্মাণের দাবি থাকলেও সম্ভব হয়নি নানা জটিলতায়।
এদিকে চরাঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়া এসব গ্রামে সবজি আবাদে বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু নৌকা দিয়ে পণ্যসামগ্রী সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয় কৃষকদের। এদিকে দশআনি নদীর ওপার প্রত্যন্ত হওয়ায়, ওইসব গ্রামে গড়ে ওঠেনি ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ওইসব গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বাধ্য হয়ে আসতে হয় নদীর এপারে কামারচরে। সেখানে রয়েছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি ডিগ্রী কলেজ ও একটি আলিয়া মাদ্রাসা। এদিকে নৌকা দিয়ে স্কুল-কলেজে আসতে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীসহ অভিবাবকদের।
কামারের চর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকাশ বলেন, আমরা এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই। এ সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। অনেকসময় নদীতে বই খাতা পরে ভিজে যায়। স্কুল ৯টায় শুরু হয়। ভয়ে একা নৌকা দিয়ে পার হতে পারি না। স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, নদীর এপারে অনেক কৃষি পণ্যের আবাদ হয়। যোগাযোগ ভালো না থাকায় সময়মতো পণ্য বাজারে তুলতে পারি না। তাই লাভবান হতে পারি না।
৪নং চর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শাহ জালাল উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষাকতা করি। নদী পারাপারের জন্য আমাদের নানা ধরনের অসুবিধা হচ্ছে। দেখা যায় আমরা সময়মত স্কুলে যেতে পারি না। নদী পার হওয়ার জন্য বসে থাকতে হয়। দশআনি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষাব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে।
এ বিষয়ে কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, দশআনি নদীতে একটি সেতু নির্মাণ মানুষের প্রাণের দাবি। ইতোমধ্যে সরকার দলীয় হুইপ এবং শেরপুর ১নং আসনের এমপি আতিউর রহমান আতিক বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছেন। আশা করি দ্রুতই দশআনি নদীতে সেতু নির্মাণ হবে।
এ ব্যপারে এলজিইডি শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দশআনি নদীতে সেতু তৈরির যাবতীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।