মমিনুল ইসলাম মোল্লা, মুরাদনগর কুমিল্লা প্রতিনিধি:
মুরাদনগর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প। যে দু/চারটি গ্রামে ঐতিহ্য টিকে আছে তাদের ব্যস্ততা দেখা য্য়া বৈশাখ মাসে। বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের মেলা বাদেও এসময় গৃহস্তের ঘরে আসে নতুন ধান। বোরো ধান মাঠ থেকে কেটে ঘরে এনে সংরক্ষণ করার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি সামগ্রীর কোন বিকল্প নেই। প্লাস্টিকের কারণে বাাঁশ ও বেত শিল্প হারিয়ে যেতে বসলেও এসময তাদের চাহিদা বেড়ে যায়। বাঁশের খেলনা ও গৃহস্থলী জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার বাঁশ-বেত শিল্পীরা।আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ-বেত ও মৃৎ শিল্প। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। বৈশাখী মাসে নতুন ধান আসাকে কেন্দ্র করে মৃৎ ও বাঁশ-বেত পল্লি এখন কর্মমুখর।এসময় মৌসুমি ব্যবসা করতে পণ্য তৈরিতে রাত-দিন কাজ করে চলেছেন কারিগররা। বাঁশ-বেত শিল্পীরা বাঁশ ও বেত দিয়ে কুলা, ডুলা, খালই, ঝাকা, মাছ ধরার পোলোসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন।পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারা এসব জিনিসপত্র তৈরিতে সাহায্য করছেন। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া সন্তানেরা বাবা-মাকে সাহায্য করছে। তাদের তৈরি এসব জিনিসপত্র পহেলা বৈশাখের মেলাসহ মুরাদনগরের কোম্পানিগঞ্জ, রামচন্দ্রপুর, বাঙ্গরা, কাশিমপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করা হয়।
মুরাদনগরের কয়েকটি গ্রামে এ শিল্প থাকলেও মাজুর গ্রামই এক্ষেত্রে সেরা। বাইরে থেকে প্রথমবার মাজুর গ্রামে ঢুকে হকচকিত হয়ে পড়বেন যে কেউই। গ্রামের ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে কিশোরী-গৃহিণীরা সবাই ব্যস্ত বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন সাংসারিক সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র তৈরিতে।কি বাড়ির উঠান, কি পুকুরের ধার, বাড়ি লাগোয়া রাস্তা সবখানেই বাঁশ ও বেত নিয়ে কাজ চলছে সবার। অবস্থা এমনই যে, বাঁশ-বেত পণ্যের গ্রাম বলে অনায়াসের পরিচয় গড়ে তোলা যায় মুরাদনগর উপজেলার মাজুর গ্রামকে।কালের আবর্তে, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর কাঁচামালের দুঃষ্প্রাপ্যতা আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে কিছুটা থেমে গেছে এ শিল্পের গতি।কমে গেছে এ পেশায় থাকা মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু রীতিমতো এখনো সমান খ্যাতি-যশ রয়েছে এই মাজুর গ্রামের হাতে তৈরি জিনিসের। এ পেশাধারীদের আয়-উপার্জন কমে গেছে ঠিকই, তবে কমেনি তাদের জিনিষের জৌলুস ও চাহিদা। এ গ্রামের পঞ্চাশের অধিক পরিবার যারা কুটির শিল্পের সাথে জড়িত। এই পেশাটি তাদের পৈত্রিক পেশা যা চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এদেরই বেশিরভাগ সবাই কমবেশি বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরির সঙ্গে জড়িত।
কাঁচামালের সংকট ও ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে তাদের সাম্প্রতিক ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।গ্রামের মধ্যে যারা এ কাজ করেন তাদের বেশিরভাগ স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে থাকেন। আর পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পণ্য চলে যায়। অর্ডার অনুযায়ী কাজ করে দিলেই পয়সা হাতে আসে। তবে অনেকে রয়েছেন যারা নিজ উদ্যোগে এ কাজ করেন এবং হাটের দিনে স্থানীয়ভাবে এসব পণ্য বিক্রি করেন।এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মুরগির খাঁচা, ডালা, সাজি, কুলা, ঝুড়ি, বেতের তৈরি ঘড়ি প্রভৃতি। বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে জড়িত স্থানীয়রা জানান, এক সময় মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের কদর থাকলেও প্লাস্টিকের কারণে এখন আর নেই। যদি বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে সরকারি ঋণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে মাজুরসহ মুরাদনগরের বাঁশ ও বেত শিল্প আবারো জেগে উঠবে।