আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে তার ডেপুটি অ্যালেক্স ওং পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। বিবিসিএ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হোয়াইট হাউস।
ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের গ্রুপ চ্যাটে ভুলক্রমে একজন সাংবাদিক যুক্ত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকারের কয়েক সপ্তাহ পরই ওয়াল্টজের পদ ছাড়ার খবরটি সামনে এলো।
এটাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সদস্যের পদত্যাগের প্রথম ঘটনা। ট্রাম্পের নির্বাচনি জয়ের পর প্রথম দিকের নিয়োগের তালিকায়ও ছিলেন মাইকেল ওয়াল্টজ।
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাটলান্টিক যখন পুরো চ্যাট প্রকাশ করে, তখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। সেই গ্রুপ চ্যাট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্কের জটিল বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসে। হুথি বিদ্রোহীদের ওপর সম্ভাব্য বিমান হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার মাঝখানে ইউরোপের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশিত হয়—যা শুধু একটি সামরিক কৌশলের প্রশ্ন নয়, বরং জোটগত সম্পর্কের গভীরে লুকিয়ে থাকা উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ।
ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে ইউরোপের জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহে। এটি শুধু একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্যও হুমকি।
এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় যুক্ত হন হুথিদের ওপর সম্ভাব্য বিমান হামলা নিয়ে। চ্যাটে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, যদি তুমি মনে করো হামলা করা উচিত, তাহলে করো। আমি শুধু ইউরোপকে আবার বাঁচাতে যাচ্ছি ভেবে বিরক্ত হই।
জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইউরোপের ফ্রিলোডিং-এর প্রতি তোমার ঘৃণাকে আমি পুরোপুরি সমর্থন করি। এটা হৃদয়বিদারক।
এ বক্তব্যগুলো কূটনৈতিক সৌজন্যের ধারেকাছেও নেই। বরং ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গভীর বিরক্তি প্রকাশ করে।
‘ফ্রিলোডিং’ বলতে— ন্যাটো জোটে ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক ব্যয় কম হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি রয়েছে, সেটিই বোঝানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার অভিযোগ করেছেন যে, ইউরোপ শুধু নিরাপত্তা ভোগ করছে, বিনিময়ে তেমন কিছু দিচ্ছে না।
ফাঁস হওয়া এই চ্যাটে সেই একই মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
এ চ্যাট ফাঁস হওয়ায় ইউরোপীয় মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মনোভাব সম্পর্কে যে বার্তা পেয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সম্পর্কের শীতলতা বাড়াবে। ইউরোপ যদি মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘বোঝা’ হিসেবে দেখে, তাহলে ভবিষ্যতের কৌশলগত সমন্বয় আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।