রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী অঞ্চলে চলছিল মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছিল। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছিল আমের কড়ালি। আম রক্ষায় গাছের গোড়ায় সেচ দিচ্ছিলেন কৃষক। আমের বোঁটা শক্ত করতে স্প্রে করা হচ্ছিল পানি। তাতেও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছিল না। একটু বৃষ্টির জন্য প্রহর গুনছিলেন চাষিরা।বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিদের সেই প্রতীক্ষিত বৃষ্টি হয়েছে।
আমচাষিরা বলছেন, এই বৃষ্টির ফলে আমের বোঁটা শক্ত হবে। কমবে ঝরেপড়া। আবার মানসম্মত আম উৎপাদনে কয়েক দিনের মধ্যেই বাগানে বাগানে শুরু হবে আমে ব্যাগিং করার কাজ। এর আগে এমন বৃষ্টিতে আমের গায়ের ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে গেছে। ব্যাগের ভেতর থাকবে চকচকে আম। কৃষি কর্মকর্তারাও বলছেন একই ধরনের কথা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার। বৃষ্টির সময় ঘণ্টায় ২০ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে ঝড়ো বাতাসও বয়ে যায়।
রাজশাহী ছাড়াও আম উৎপাদনকারী অন্য তিন জেলা নওগাঁ, নাটোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃষ্টি হয়েছে। এসব জেলায় অল্প কিছু আম ঝরেও পড়েছে ঝড়-বৃষ্টিতে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জের আমচাষী আকবর আলী বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম। কড়ালি (গুটি) ঝরেপড়া রোধে গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছিল। এতে খরচ বাড়ছিল। বৃষ্টির ফলে এখন আবার খরা শুরু না হওয়া পর্যন্ত সেচের দরকার হবে না। এতে চাষিদের উপকার হলো।
রাজশাহী ম্যাঙ্গো সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক প্রতি মৌসুমে প্রায় ১০ টন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেন। ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদিত বেশিরভাগ আম বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করা হয়।
আগামী ২০ এপ্রিল থেকে তিনি এবারও ব্যাগিং শুরু করবেন। যদিও এবার কী পরিমাণ আম রপ্তানি হবে তা এখনো জানায়নি কৃষি বিভাগ।
আনোয়ারুল হক বলেন, ব্যাগিংয়ের আগে একটা বৃষ্টি হলে খুব ভালো হয়। আমটা পরিষ্কার হয়ে যায়। পরিষ্কার আম ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলে তাতে আর ধুলোবালি লাগে না। কোনো দাগও হয় না। তাছাড়া বৃষ্টি হলে আমের বোঁটা শক্ত হয়। এই উপকারগুলো পাওয়া গেল।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, আম বৃষ্টি, ঝড়-ঝাণ্ডার মধ্যেই বেড়ে ওঠে। আগের বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হলেও এবারের বৃষ্টি সোনায় সোহাগা হয়ে গেছে। টানা খরতাপ যাচ্ছিল, তারপরই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, এই বৃষ্টির জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। বৃষ্টি হওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। এবার আমের ‘অনইয়ার’।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন এবং রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
গত বছর ফলন কম হওয়ায় এবার বেশি হবে বলে আমচাষি, গবেষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।