শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের জমিতে মাষকলাই চাষে ঝুঁকছেন চাষি। নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও চরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন মাষকলাই আবাদের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটির অনাবাদি জমিতে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন, চাহিদা অনুযায়ী দাম এবং ব্যয়ের তুলনায় লাভ কয়েকগুণ বেশি পাওয়ায় চাষিরা মাষকলাই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের তীরবর্তী অনুর্বর পতিত জমিতে অন্য ফসলের চেয়ে মাষকলাই ডালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় এলাকার চাষিরা ধান ছেড়ে মাষকলাই চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার উৎপাদিত মাষকলাই ডালের দানা অধিক পুষ্ট ও সুস্বাধু হওয়ায় বেশ চাহিদা রয়েছে। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান, অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী, কমছে বেকারত্ব, বাড়ছে কৃষি উৎপাদন।
মাষকলাই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোণা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী ও উরফা ইউনিয়নের চাষিরা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মাষকলাই চাষের জন্য বেশ উপযোগী। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শে তারা মাষকলাই ক্ষেতের যতœ নিচ্ছেন। নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২৫ একর জমিতে মাষকলাই চাষ করা হয়েছে। তবে কৃষকরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদসহ বিভিন্ন নদী ও শাখা নদীর চরাঞ্চলের জমিতে এবং রাস্তার পাশের পতিত জমিতে বপন করায় এবার ২শ একরের অধিক জমিতে মাষকলাই আবাদ হয়েছে।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, মাষকলাই চাষে কোনো খরচ নেই বললেই চলে। যে খরচ হয় তার তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি লাভ পাওয়া য়ায়।
শস্য মজুদকারী তথা মজুদ ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে চাষকৃত ডাল ফসলের মধ্যে মাষকলাইয়ের স্থান চতুর্থ। মোট উৎপাদিত ডালের মধ্যে ১২% থেকে ১৫% আসে মাষকলাই থেকে। ধান, গম ও ভূট্টা মজুদ করার চেয়ে মাষকলাই ডাল বা সল্পকালীন অন্যান্য শস্য মজুদ করলে লাভ ও কদর উভয়ই বেশি পাওয়া যায়। এতে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এ বছর নকলা উপজেলায় উফসী জাত বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বিনামাষ-১, বিনামাষ-২ এবং স্থানীয় জাত রাজশাহী ও সাধুহাটি জাতের মাষকলাই বেশি চাষ করা হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি ১.৫ টন থেকে ২ টন উৎপাদন হিসাবে মাষডাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।