মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এদেশের ঐশ্বর্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে গানের বাণীতে লিখেছেন-‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি-এই দেশেরই ধুলায় পড়ি-মানিক যায়রে গড়াগড়ি, বিশ্বে সবার ঘুম ভাঙালো এই দেশেরই জীয়ন কাঠি।’ অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই এই গানের প্রতিফলন ঘটেছিল বর্তমান বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকায়। ফুল, ফসল, মাছ কিংবা পশুসম্পদে ভরপুর ছিল এই অঞ্চল, যেখানে সুখী মানুষ শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও এগিয়ে ছিল। বহু মূল্যবান ধনসম্পদ এদেশের ধুলা মাটিতে গড়াগড়ি খেত, যা বিশ্ববাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। আর এই সম্পদের লোভেই বারবার এই দেশে বহিঃশত্রুরা আক্রমণ চালায় ও দখলদারিত্ব বজায় রাখে। নিজ সম্পদ রক্ষা কিংবা শত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে গিয়েই এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ নিজের অলক্ষে যেন অস্ত্র হাতে যোদ্ধা হয়ে ওঠে। এই যোদ্ধারাই একে একে লাঠিয়াল, বর্গি, মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি বাহিনীসহ বহু অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতি, রণকৌশল, পরিবেশ ও পরিস্থিতিগত কারণে তারা মুঘল, ব্রিটিশ, জাপানি বা পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিলে অস্ত্র ধরেছে তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে।
১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও ব্রিটিশ ভারত তথা গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এই যুদ্ধে যোগ দেয় ৪ আগস্ট তারিখে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার (বর্তমান বাংলাদেশসহ) জমিদার, রাজা ও মহারাজারা ১৪ আগস্ট ১৯১৪ তারিখে কলকাতায় এক সভায় মিলিত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা অর্থ, লোকবল ও যুদ্ধক্ষেত্রে একটি চিকিৎসা দল পাঠিয়ে ব্রিটিশ সেনাদের পাশে থাকবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছয় মাসের মধ্যেই শতাধিক চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহকারী ‘বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর’ পরিচয়ে দেশের গন্ডি ছেড়ে তাঁবু ফেলে ইরান, ইরাক, তুরস্ক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন মরু অঞ্চলে। সেখানে তারা সাফল্যের সঙ্গেই গড়ে তোলে বেঙ্গল স্টেশনারি হাসপাতাল। আর এভাবেই সে যুগের বাঙালি যোদ্ধাদের নতুন যুদ্ধ যুগে প্রবেশ ঘটে। পরবর্তীতে নানাভাবে ভারতীয় যোদ্ধারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্ত হয়। একাধিক সূত্র মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৫ লাখ ভারতীয় পুরুষ অংশ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে কয়েক হাজার ছিল শ্রমিক পর্যায়ে। তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের মাঠে যায় এবং সৈন্য ও তাদের ব্যবহৃত পশুদের জন্য খাবার, জল এবং অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে। তাদের হাতে নির্মিত হয়েছিল হাসপাতাল, ব্যারাক, বন্দর, রাস্তা, রেলপথ এবং রানওয়ে। এই ভারতীয়দের একটা বড় অংশ ছিল এ অঞ্চলের বাঙালি, যাদের অনেকেই আর ঘরে ফেরেনি।
১৯১৮ সালের শেষ ভাগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থামার পাঁচ বছরের মধ্যে মূলত যুদ্ধে অভিজ্ঞ ব্রিটিশ-ভারতের সৈন্যদের নিয়ে ব্রিটিশ সেনা অফিসারদের নেতৃত্বে দুটি লাইট ক্যাভালরি, দুটি পাঞ্জাব ও একটি করে মারাঠা, রাজপুত, হায়দরাবাদ ও মাদ্রাজ রেজিমেন্ট বা প্রতি দলে প্রায় ৮০০ সেনা নিয়ে ৮টি সেনাদল গড়ে ওঠে। কিন্তু বাঙালিদের নিয়ে নিজস্ব কোনো রেজিমেন্ট জন্ম না হওয়ায় এক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয় বাঙালি সৈনিকদের প্রাপ্য সম্মান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ২১ বছর পর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই বিশ্বযুদ্ধেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুণ বাঙালিরা সাহসিকতার সঙ্গে সম্মুখসমরে এবং নানাভাবে নেপথ্যে থেকে অংশগ্রহণ করে। বিশেষ করে ব্রিটিশ ভারতীয় কমান্ড বা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি বিহার রেজিমেন্ট মূলত বাঙালিদের নিয়ে গড়া ১২৫৬ ও ১৪০৭ নম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানি (প্রতিটি কোম্পানিতে প্রায় ২০০ সৈন্য) প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। আরেক দল নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাপানিদের পক্ষে যোগ দেয় এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ব্রিটিশ আর্মির তৎকালীন বাঙালি সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আবদুল গনি এই ১২৫৬ ও ১৪০৭ নম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানির সেনাদের নিয়ে পৃথক বাঙালি ইউনিট বা রেজিমেন্ট করার জন্য ২০ পৃষ্ঠার লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ততদিনে ভারতের পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানেও বিভিন্ন জাতিভিত্তিক রেজিমেন্ট বা সেনাদল গড়ে উঠেছিল, যেমন বেলুচ রেজিমেন্ট। মেজর গনির তৎপরতায় মুম্বাই থেকে এই দুটি কোম্পানিকে ১৯৪৭ সালে বিশেষ ট্রেনযোগে ঢাকায় আনা হয় এবং তারই নেতৃত্বে বর্তমান ঢাকা সিএমএইচের উত্তরে তাঁবু খাটিয়ে রাখা হয়। এরই মাঝে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত বিভক্ত হয় ও স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ এর ফলে পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। এবার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের সম্মতি আদায়ে যুগপৎ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান মেজর গনি। তিনি ও তার সহযোগীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দফতর থেকে বাঙালি সেনাদের নিয়ে একটি পদাতিক রেজিমেন্ট গঠনের আদেশ জারি হয়, যার নামকরণ করা হয় ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’। অন্যদিকে ব্রিটিশরা ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক ও সামরিক বিষয়ে উভয় দেশকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্রিটিশ সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভি জে ই পেটারসান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম অধিনায়ক নিযুক্ত হন।
পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ক্যাপ্টেন গনিকে ভালোভাবে চিনতেন এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ফলে তিনি ক্যাপ্টেন গনিকে নারায়ণগঞ্জে রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন এবং নবগঠিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্য বাঙালি যুবকদের সৈনিক পদে ভর্তি করার দায়িত্ব প্রদান করেন। মেজর গনি তখন সমগ্র দেশ ঘুরে ঘুরে লম্বা-সুস্বাস্থ্যবান যুবকদের বেছে বেছে সৈনিক পদে ভর্তি করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। এসব নবীন সৈনিককে পরে ঢাকার কুর্মিটোলায় কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে দাফতরিকভাবে ক্যাপ্টেন গনি ও ক্যাপ্টেন এস ইউ খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসে এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব পান মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেন। সৈনিকদের উপদল (কোম্পানি) অধিনায়ক করা হয় মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী ও মেজর সাজাউয়াল খানকে। অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক মাহেন্দ্রক্ষণে ঢাকার কুর্মিটোলায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল স্যার ফ্রেডারিক ব্রেবর্ন কর্তৃক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন বা প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, যা ‘সিনিয়র টাইগারস’ নামে আজ ইতিহাসের অংশ ও বিশ্বনন্দিত। সামরিক কায়দায় জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহ্যমন্ডিত এই পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নবাব হাবিবউল্যাহ, হাসান আলী, নূরুল আমীন, হাবিবুল্লাহ বাহার, আবদুল হামিদ খান, আফজাল খান, সামরিক বাহিনীর উপ-আঞ্চলিক অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান ও কুচকাওয়াজ শেষে সামরিক ঐতিহ্য অনুসারে আমন্ত্রিত অতিথিরা চা-চক্রে মিলিত হন। পূর্ব পাকিস্তানের উপ-আঞ্চলিক অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইয়ুব খান এ সময় কথা প্রসঙ্গে বলেন যে, নতুন এই রেজিমেন্টের সৈন্যরা বাংলা নয়, উর্দুতে কথা বলবে। চা-চক্রে যোগ দেওয়া বাঙালি অফিসাররা বিশেষত মেজর মুহাম্মদ তাহাম্মল হোসেন আইয়ুব খানের এই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন এবং যুক্তি দিয়ে বলেন, অন্যান্য রেজিমেন্টের সৈন্যরা নিজ নিজ ভাষায় (যেমন : পোসতু, উর্দু, হিন্দি ইত্যাদি) কথা বলতে পারলে বাঙালি সৈন্যরাও তা পারবে। ক্যাপ্টেন গনি সবার সামনে ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানকে জানিয়ে দেন যে বাঙালি সৈন্যরা কখনো উর্দুতে কথা বলবে না। এই চা-চক্রের কিছুদিন পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ইউনিট ও ব্যারাকে উর্দুতে কথা বলার নির্দেশ জারি হলে মেজর এম টি হোসেন ও ক্যাপ্টেন গনি তা অমান্য করেন। এ জন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। তবুও পৃথক সত্তা নিয়ে বাঙালিদের আরও রেজিমেন্ট গড়ে তোলা এবং বাংলায় কথা বলার দাবিতে অনড় থাকেন ‘টাইগার গনি’ খেতাবপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গনি ও তার সাহসী সহচরবৃন্দ।
১৯৪৭ সালের আগস্টে পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও উভয় দেশের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তসহ নানা বিষয়ে শত্রুতা লেগেই ছিল। বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত সংঘর্ষের বাইরে ১৯৬৫ সালে উভয় দেশের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে এক মাসের ছোটখাটো যুদ্ধের পর পাকিস্তানের সৈন্যরা ভারতের দিকে বড় অভিযান শুরু করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় সৈন্যরা লাহোর দখলের জন্য অগ্রসর হয়, যার জন্য পাকিস্তানিরা প্রস্তুত ছিল না। এ সময় লাহোর শহর রক্ষার জন্য দ্রুত মোতায়েন করা হয় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে। মূলত বাঙালিদের নিয়ে গড়া প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাম্বাওয়ালি-রাভি-বেদিয়ান (বিআরবি) খালের ধারে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে ও প্রাণপণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় তারা ভারতীয়দের একাধিক আক্রমণ রুখে দেয় এবং কাশ্মীর ও অন্যান্য রণক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানিদের অতিরিক্ত সৈন্য না আসা পর্যন্ত লাহোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কালের পরিক্রমায় ঘনিয়ে আসে একাত্তর। ততদিনে এ কথা আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, ব্রিটিশ বেনিয়া আর পাকিস্তানি শাসকরা মূলত একই মুদ্রার দুই পিঠ। বাঙালিদের প্রতি অবহেলা এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ধারাবাহিকতায় শুরু হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মোট ৮টি ইউনিট (প্রথম থেকে অষ্টম বেঙ্গল) গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম বেঙ্গল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। আর অবশিষ্ট ৫টি ব্যাটেলিয়নের বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই গুলি চালিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায় জানান দেয় যে, আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম বেঙ্গল যথাক্রমে যশোর, জয়দেবপুর, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরুতেই প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে ও ছোট ছোট অভিযানের মধ্য দিয়ে শত্রুর মাঝে বিভীষিকা তৈরি করে। পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এই ৫টি বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, পুনর্গঠন, নতুন সৈন্য সংগ্রহ এবং অফিসারদের সমন্বিত নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে নিজেদের নিয়মিত বাহিনীতে পরিণত করে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং মিত্র বাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে ঢাকার দিকে যাত্রা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই ভারতে গঠিত হয় নবম, দশম ও এগারোতম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ যশোরে জন্ম নেয় ১২তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
১৯৯০-৯১ সালে দখলদার ইরাকি বাহিনীর হাত থেকে পবিত্র মক্কা-মদিনা রক্ষা ও অধিকৃত কুয়েত পুনরুদ্ধারে আমেরিকাসহ বহুজাতীয় বাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে লড়াই করে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা। ১৯৯২ সাল থেকে টানা দুই বছর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল যুদ্ধবিধ্বস্ত কুয়েত পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল থেকে পরবর্তী প্রতিটি বেঙ্গল রেজিমেন্ট একাধিকবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এবং গণতন্ত্র চর্চার নির্বাচনে জনগণ ও সরকারের আস্থার নাম বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
লেখক : প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাবেক অফিসার। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন
email: directoradmin2007@gmail.com