খান লিটন, টরেন্টো (কানাডা) থেকে
সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত নায়াগ্রা দেখার অভিপ্রায়ে গত ৫ অক্টোবর নিউইয়র্ক লাগোরগা এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং উড়োজাহাজে সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে আকাশে বাতাসে ভর করে ১২টা ৩৭ মিনিটে কানাডার পিটারসন টরেন্টো এয়ারপোর্টে নামলাম।
নিউইয়র্কে বোডিং শেষ করে বসেছিলাম প্লেনের জন্য। একজন সুদর্শন পুরুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বাংলাদেশি কিনা।
বললাম, জি। সঙ্গে ছিল তার সহধর্মিণী। আমরা সবাই পরিচিত হলাম। তারা টরেন্টো থাকেন। নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন আত্মীয়কে দেখতে। আমাকে চাসহ আপ্যায়ন করলেন। আমি জার্মানির মনোগ্রাম খচিত একটি শো-পিস উপহার দিলাম।
একপর্যায়ে জানতে চাইলাম, টরেন্টো বেগমপাড়া আসলে কী। আমি যেতে চাই। ভদ্র মহিলা হেসে দিয়ে বললেন, তিনিই বেগমপাড়ার একজন বেগম। শুনলাম, বেগমপাড়ার বেগমদের কথা। আসলে হংকং চাইনিজরা শতাব্দী ধরে এই বেগমপাড়ায় বসবাস করেন। বাংলাদেশের লোক হাতেগোনা। রয়েছে পাকিস্তানি, ভারতীয় ও তুরস্কসহ আরব দেশের বেগমরা। এখানে ওই সমস্ত দেশের ধনী পরিবারের বেগমরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন ও বাচ্চাদের ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। আর তাদের স্বামীরা নিজের দেশে বা অন্য কোথাও ব্যবসা করেন বা বড় বড় চাকরি করেন। টরেন্টো আসা যাওয়া করেন মাঝে মাঝে।
এখানে বেগমরা সন্তানদের নিয়ে থাকেন, তাই এর নাম বেগমপাড়া। এরা সবাই ধনী পরিবার ও শিক্ষিত। যেমন এই বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এবং তার স্বামী কিবরিয়া বাংলাদেশের একটি বৃহৎ চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্টন কোম্পানির মালিক।
তবে দুই-একজন অবৈধ সম্পদের মালিক আছেন বলে স্বীকার করেন। এই বেগম তাদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে গেলেন। দুপুরের খাবারের পর বেগমপাড়ার বেশ কয়েকজন বেগমদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বেগমপাড়া নিয়ে আমার যে নেগেটিভ ধারণা ছিল, তা দূর হলো। আশা করি আপনাদের নেগেটিভ ধারণা থাকলেও দূর হবে।
তবে অন্য একটি ব্যাপার খুব আহত করেছে আমাকে। কানাডা আসার প্রায় দুই মাস আগে যাদের বলেছিলাম, আমি কানাডা আসব আপনাদের দেখতে। আমার খুব চেনা তিন-চারজন সাংবাদিক, লেখক ও বিউটি সেলুনের মালিক যে আমাকে সবসময় বলতো, ভাই, আমার এখানে বেড়াতে আসবেনই। কিন্তু তারা কেউই আসেননি বা আসার সময় পাননি আমার হোটেলে। আমি তাদের সাথে সামনা-সামনি হ্যালো বলার জন্যই টরেন্টো এসেছিলাম। একজন অবশ্য গাড়ির অভাবে আসতে পারেননি। অন্যজন সেমাই বানিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন, যা নিয়ে অনেক মজা হয়েছে। অন্য দুইজন ফোন ধরেনি বা ব্যাকও করেননি। সবাইকেই ধন্যবাদ।
অন্যদিকে ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে অনেক প্রশ্নের মাঝে জিজ্ঞাসা করলেন- আমার কাছে বন্দুক আছে কিনা? বললাম, নাই। আর মনে মনে বললাম, বন্দুক থাকলে তোমাকে ভয় দেখিয়ে বের হয়ে যেতাম। কারণ সে আমাকে এক ঘণ্টায় হাজারের একটু কম প্রশ্ন করেছে। সর্বশেষে আমি বললাম, আপনি জার্মানি আসলে আমরা এত কথা জিজ্ঞাসা করব না। হেসে বলল, না আমি জার্মানি যাব না। আমি যাব ঢাকা, তোমাদের ঢাকা। এমনটাই ছিল বেগমের সঙ্গে কানাডা ভ্রমণ।