গাজীপুর প্রতিনিধি :
কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভি অনুসারীদের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ইজতেমাকে ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ময়দানে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থানের তালিকা করা হয়েছে।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিন দিনের ইজতেমা ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় ধর্মীয় উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের সব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পূর্বপাড়ে নামাজের মিম্বর ও উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও শামিয়ানা টানানো, বিদ্যুৎ ও মাইক সংযোগের জন্য তার টানানোসহ তাশকিল কামরা, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে বধিরদের বয়ান শোনার জন্য পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে। বুধবার থেকে দেশি ও বিদেশি মেহমানরা আসতে শুরু করেছেন।
বৃহস্পতিবারের (১৯ জানুয়ারি) মধ্যেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ময়দানে এসে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নেবেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ।
দ্বিতীয় পর্বে ময়দানে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থান
দ্বিতীয় পর্বে পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৮৫টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- ঢাকা (খিত্তা নং ১-৪, ৬-২২), টঙ্গী (খিত্তা নং-৪), নরসিংদী (খিত্তা নং-২৩), গোপালগঞ্জ (খিত্তা নং-২৪), মাদারীপুর (খিত্তা নং-২৫), ফরিদপুর (খিত্তা নং-২৬), রাজবাড়ী (খিত্তা নং-২৭), শরীয়তপুর (খিত্তা নং-২৮), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা নং-২৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা নং-৩০), টাঙ্গাইল (খিত্তা নং-৩১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা নং-৩২), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা নং-৩৩), গাজীপুর (খিত্তা নং-৩৪), বগুড়া (খিত্তা নং-৩৫), নওগাঁ (খিত্তা নং-৩৬), নাটোর (খিত্তা নং-৩৭), মৌলভীবাজার (খিত্তা নং-৩৮), সিলেট (খিত্তা নং-৩৯), রাজশাহী (খিত্তা নং-৪০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা নং-৪১), পাবনা (খিত্তা নং-৪২), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা নং-৪৩), জয়পুরহাট (খিত্তা নং-৪৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা নং-৪৫), চাঁদপুর (খিত্তা নং-৪৬), কুমিল্লা (খিত্তা নং-৪৭), খাগড়াছড়ি (খিত্তা নং-৪৮), নেত্রকোনা (খিত্তা নং-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা নং-৫০), জামালপুর (খিত্তা নং-৫১), সুনামগঞ্জ (খিত্তা নং-৫২), হবিগঞ্জ (খিত্তা নং-৫৩), শেরপুর (খিত্তা নং-৫৪), কক্সবাজার (খিত্তা নং-৫৫), রাঙ্গামাটি (খিত্তা নং-৫৬), বান্দরবন (খিত্তা নং-৫৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা নং-৫৮), নোয়াখালী (খিত্তা নং-৫৯), ফেনী (খিত্তা নং-৬০), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা নং-৬১), পিরোজপুর (খিত্তা নং-৬২), বরগুনা (খিত্তা নং-৬৩), ঝালকাঠি (খিত্তা নং-৬৪), পটুয়াখালী (খিত্তা নং-৬৫), ভোলা (খিত্তা নং-৬৬), বরিশাল (খিত্তা নং-৬৭), কুষ্টিয়া (খিত্তা নং-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা নং-৬৯), বাগেরহাট (খিত্তা নং-৭০), নড়াইল (খিত্তা নং-৭১), খুলনা (খিত্তা নং-৭২), যশোর (খিত্তা নং-৭৩), মাগুরা (খিত্তা নং-৭৪), ঝিনাইদহ (খিত্তা নং-৭৫), সাতক্ষীরা (খিত্তা নং-৭৬), মেহেরপুর (খিত্তা নং-৭৭), নীলফামারী (খিত্তা নং-৭৮), দিনাজপুর (খিত্তা নং-৭৯), রংপুর (খিত্তা নং-৮০), লালমনিরহাট (খিত্তা নং-৮১), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা নং-৮২), গাইবান্ধা (খিত্তা নং-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা নং-৮৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা নং-৮৫)। এসব খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।
নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থেকে আসা হাজী তাজুল ইসলাম জানান, মহান আল্লাহকে রাজি খুশি করাতে ইজতেমা ময়দানে এসেছি। ময়দানে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের বয়ান শোনার পাশাপাশি নামাজ, তসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসগার ও নফল ইবাদতে মশগুল থাকব।
মালয়েশিয়া থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুসল্লি জানান, দুই বছর পর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আমরা বাংলাদেশেকে ভালোবাসি। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাকে ভালোবাসি। এ আয়োজনে সহায়তা করায় বাংলাদেশের সরকারকে অভিনন্দন জানাই।
প্রসঙ্গত, ২০ জানুয়ারি দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
২০২০ সালে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।