অনলাইন ডেস্ক: বর্ষার শুরুতেই মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা। টানা বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। নিম্নাঞ্চল ও বহু এলাকার বাসাবাড়ি-দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় খুলনা নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের ৮২৩ কোটি টাকা প্রকল্প ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ২২টি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকেরা বলছেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খাল দখল ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ২০ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। নগরীর নতুন রাস্তা মোড় থেকে আবু নাসের হাসপাতাল এবং মুজগুন্নি সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া আহসান আহমেদ রোড, রয়েল মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, বাস্তুহারা, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা ও টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রুপসা নতুন বাজারের মতো এলাকাগুলোতে প্রায় কোমরসমান পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাটের ড্রেন উপচে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রয়্যাল মোড়, বাইতিপাড়া মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, বাস্তুহারা, চানমারী, লবণচরা, টুটপাড়া, এবং মিস্ত্রিপাড়াসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল রয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
নগরীর ইকবালনগরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় বাসার বাইরে বের হতে পারিনি।
রিকশাচালক মিলন মিয়া বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। মাত্র দু-তিনটি ভাড়া হয়েছে। যা আয় হয়েছে, তা দিয়ে আজকে পাঁচজনের সংসার চালানো যাবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত খুলনায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টি।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এ ছাড়া, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই।
এর আগে ২০১৮ সালে ও ২০২৩ সালে নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮২৩ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন তিনি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ছয়শ কোটি টাকা খরচ করে নগরীর বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণ ও সাতটি খাল খনন করা হয়েছে। এরপরও নগরবাসী সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজজামান বলেন, গত চার দশকে সব মেয়রই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নিলে কোনো লাভ হবে না।
এ বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের মতো কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে নগরবাসী সুফল পাবে।’