নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।এ সময় ধর্ষণের ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে অভিযুক্ত বখাটেরা। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর কথিত প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার নিজগাবী গ্রামের ইউপি সদস্য শাহজাহানের ছেলে আজিজুল ইসলাম (১৮), একই গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে রফিক (২৪) ও জামাল উদ্দিনের ছেলে সাকিব মিয়া (২৬)। তারা সবাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
বুধবার ভোরে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার নিজগাবী গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী কিশোরী (১৭) মোহনগঞ্জ পৌরশহরের একটি গ্রামের বাসিন্দা। কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ছেড়ে দিয়ে পরে বাসায় অবস্থান করছিল।
মামলার অভিযোগ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রি আজিজুলের সঙ্গে ৩-৪ বছর আগে ইমুতে কথোপকথনের সূত্র ধরে ওই কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো।
গত ১৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে আজিজুল ওই কিশোরীকে বিয়ে করার প্রলোভনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ শহরের আলোকদিয়া সেতুর উপর ডেকে নিয়ে যায়।
পরে সেখান থেকে আজিজুল আর রফিক মিলে মোটরসাইকেলে করে ওই কিশোরীকে ধর্মপাশা উপজেলার নিজগাবী গ্রামের সামনের একটি হাওড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।
এ সময় ধর্ষণের ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। কিছু সময় পর সাকিব সেখানে যায়, পরে সাবিকও তাকে ধর্ষণ করে।
এভাবে পর্যায়ক্রমে রাতভর ধর্ষণ শেষে ভোরে ওই কিশোরীকে তার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় ওই তিনজন। সেইসঙ্গে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য তারা ওই কিশোরীকে শাসিয়ে যায়। জানালে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এদিকে ভয়ে ঘটনা চেপে থাকে ওই কিশোরী। পরে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। ঘটনা শুনে মঙ্গলবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই।
অভিযোগ পেয়ে ভোরে অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ধর্ষণ ও এ ঘটনার ভিডিও ধারণের বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্ত আজিজুল ইসলাম জানায়, আমরা তিনজনই রাজমিস্ত্রির কাজ করি। প্রেমের সম্পর্কের সূত্রেই ওই মেয়েকে সেদিন রাতে তুলে নিয়ে যাই। পরে হাওড়ে নিয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণ করি। আমরা মজা করেই একে অন্যের ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করি। পরে ডিলিট করে দিয়েছি।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই বলেন, এটি একটি জঘন্য ঘটনা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। এ ঘটনায় পুলিশ দ্রুত অ্যাকশন নিয়েছে।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েই দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছি। অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাইয়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, মধ্যরাত থেকেই তাদের ধরতে অভিযান শুরু করি। শুধুমাত্র আজিজুলের মোবাইল নাম্বার আমাদের হাতে ছিল। প্রথমে আজিজুলকে গ্রেফতার করি। তারপর কৌশলে তাকে দিয়েই মোবাইলে কল করিয়ে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।