জাবি প্রতিনিধি:প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। নিহত তাকিয়া তাসনিম বিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
আজ রবিবার ভোর ৫টায় হলের ৭০০৫ নম্বর রুমে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক ছাত্রীরা। পরে হলের ছাত্রীরা মরদেহ নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
তাকিয়ার বাবার নাম আরিফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালীতে। তাকিয়া তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
প্রত্যক্ষদর্শী একই ব্লকের ছাত্রী শিউলি আক্তার বলেন, ‘ভোর ৪টা ৪৬ মিনিটে একটি নম্বর থেকে আমার নম্বরে কল আসে। অপর পাশ থেকে একটা ছেলে বলে তুমি কি তাকিয়ার পাশের রুমের? আমি বলি আমার থেকে একটু দূরে ওর রুম। সে বলে দ্রুত তাকিয়ার রুমে যান ও সুইসাইড করতে পারে। পরে আমি দৌঁড়ে তাকিয়ার রুমে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করি। এরপর আরও কয়েকজন লোক জড়ো হয়। পরে দরজা ভেঙে দেখি সে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। পরে কয়েকজন ধরে তাকে বিছানায় নামানো হয়।’
আরেক ছাত্রী উম্মে মারিয়াম বলেন, ‘আনুমানিক ভোর ৫টায় খবর পাই ৭০০৫ নম্বর রুমে একজন ঝুলে আছে। সেখানে গিয়ে দেখি তাকিয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছে। এরপর একটি বটি দিয়ে ওড়না কেটে তাকে খাটে শুইয়ে দিই। তখন গলায় হাত দিয়ে দেখি তার গলা ঠাণ্ডা আবার হালকা গরমও ছিল। গলায় তেমন দাগ ছিল না। তার পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিলো।’
তাকিয়ার সহপাঠী ও হল প্রভোস্ট সূত্রে জানা যায়, তাসনিম আবাসিক হলে অনিয়মিত ছিলেন। তিনি সাভারে মামার বাসায় থেকে ক্লাস করতেন। গতকাল রাতে তিনি হলে আসেন। তার অন্য রুমমেটরা হলে না থাকায় একাই রুমে ছিলেন। পুলিশ নিহতের রুম থেকে ডায়েরি, ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
নিহত তাকিয়ার স্থানীয় অভিভাবক মামা মনির হোসেন বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার মোবাইলে হল থেকে একটা ফোন আসে। এরপর আমাকে বলা হয় তাকিয়া আত্মহত্যা করেছে। পরে আমি সাভার থেকে ঘটনাস্থলে যাই এবং দেখি যে তাকে ওড়না কেটে খাটের ওপর নামানো হয়েছে। এর আগে আমি তাকিয়ার বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। ’ তার বাব-মা মাগুরা থেকে রওনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তাকিয়ার মোবাইল ফোনে দেখা যায়, আত্মহত্যার আগে তিনি ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেছেন।
সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তিটি তার প্রেমিক সাব্বির। ভিডিও কলে তার সঙ্গে প্রেমিকের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তিনি প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সাব্বির তাকিয়ার সহপাঠীদের বিষয়টি অবগত করেন এবং মেয়েটিকে বাঁচাতে বলেন। তবে সহপাঠীরা রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে হল প্রভোস্টকে জানান।
পরে হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে একপর্যায়ে দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান সহপাঠীরা। এ সময় তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে প্রভোস্ট আবেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি গতরাতে প্রায় ১০টা পর্যন্ত হলে ছিলাম ১৬ ডিসেম্বর ফিস্টেরা কাজে। আনুমানিক রাত পাঁচটার দিকে আমার কাছে এই তথ্য দেয় মেয়েরা। আমি তাদেরকে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে বলি এবং হল সুপারকে বিষয়টি অবগত করি। সেই সঙ্গে মেডিকেল সেন্টারে ফোন দিয়ে ডাক্তারকে সেখানে যেতে বলি। মেয়েরা প্রথমে দরজা ভাঙতে ভয় পাচ্ছিল। একপর্যায়ে কিছু সাহসী মেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তাই আমরা পুলিশে জানিয়েছি। পুলিশ এসেছে। তার বাড়িতেও জানানো হয়েছে। তার স্থানীয় অভিভাবক তার মামা এসেছে। তার রুমে কিছু ডায়েরি ও মোবাইলসহ কিছু জিনিস পত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ সেগুলো দেখছে। সেখানে হয়তো কিছু থাকতে পারে।’
পুলিশের ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক মাসুদ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিহত শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী ও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এবং হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তারা অনুমতি দিলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’