অনলাইন ডেস্ক:
দুই তিন মাসের মধ্যে প্রবাসীদের ইমো হ্যাক করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মত আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। এই চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের পরিচয় দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে থাকে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এর আগে ইমো আইডি হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ হ্যাকার চক্রের মূলহোতাসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি ডিবির ওয়ারী বিভাগ।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. আব্দুল মমিন, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রবি, মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ, মো. সাব্বির, মো. চাঁন মোল্লা এবং মো. আরিফুল ইসলাম। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ১২ টি মোবাইল ফোন এবং হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১৯ টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ৯ অক্টোবর রাত ১০ টার দিকে সময় ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেমের ইমু আইডি থেকে একটি মেসেজ আসে “আমার টাকার প্রয়োজন, আমি বিকাশ নম্বর পাঠাইলে টাকা দিও”। পরের দিন দুপুর ১২ টার দিকে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের ইমু আইডিতে আর একটি মেসেজ আসে “আজকে বিকাশের রেট কত? “২৫ হাজার টাকা পাঠানো যাবে”।
এরপর আরো কয়েকটি মেসেজ ও ভয়েজ মেসেজ আসে। পরে নুরুল ইসলাম সেই মেসেজের উপর ভিত্তি করে হ্যাকারদের দেয়া বিকাশ নম্বরে তিনবারে ৬৫ হাজার টাকা সেন্ড করে। পরবর্তীতে নূরুল ইসলামর তার বড় ভাইয়ের ইমো আইডি বন্ধ পেলে তার ভাবির ইমো আইডি থেকে বড় ভাই মো. আবুল কাশেমকে ৬৫ হাজার টাকা পাঠানোর কথা জানায়। প্রতিউত্তরে তার বড় ভাই কাতার প্রবাসী কাশেম তার ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং সেই ইমো আইডি থেকে বিভিন্ন ইমো আইডিতে মেসেজ দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। নূরুল ইসলাম তার প্রবাসী বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয় যে, তার টাকা হ্যাকারা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে। পরে নুরুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় আসামীদের গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তাররা পরষ্পরের যোগসাজসে তথ্য প্রযুক্তি অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ ইমো আইডি হ্যাকিং চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা দেশবিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করতো। তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ওয়ারী থানায় একটি মামলা করা করা হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. তরিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ওয়ারী জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. আহসান খানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এই চক্রটির দৌরাত্ম নাটোর ও রাজশাহী এলাকায় বেশি। তবে এরা মাদারীপুর জেলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। এই চক্রের সদস্যরা খুব স্বল্প শিক্ষিত। তারা সপ্তম অথবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এই চক্রটি তথ্য প্রযুক্তির অপ ব্যবহার করেছে। পিন নম্বর হাতিয়ে নেয়। পরে ওই পিন নম্বর নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে। আজ পর্যন্ত তারা ৫০ লাখ টাকার মত আত্মসাৎ করেছে। প্রবাসীদেরকে টার্গেট করেই তারা ইমো হ্যাক করে। পরে তাদের আত্মীয়-স্বজন সেজে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ কেউ টাকা চাইলে যাচাই করে টাকা দিবেন। কাউকে পিন নম্বর ওটিপি নম্বর দিবেন না। চক্রের মূল হোতা যারা প্রশিক্ষণ দেয় আর যারা প্রশিক্ষণ নেয় তাদেরকে আমরা তাদের বিষয়ে ক্লু পেয়েছি।