অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ভোটার হতে ইচ্ছুক নাগরিকের সব ডকুমেন্টের সঙ্গে তার পিতা-মাতার সব তথ্যের মিল না হলে সেবা পাওয়া যাবে না।
সংস্থাটির এনআইডি শাখার পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার এমন এক নির্দেশনা ইতোমধ্যে সব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, গত ৬ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশগুলোতে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
সুপারিশসমূহ
(ক) নতুন ভোটার নিবন্ধনকালে উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসারকে মাসভিত্তিক নিবন্ধন রেজিস্টার ব্যবহার করতে হবে।
(খ) নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে উপস্থিত ভোটারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে যেসব কাগজপত্র অনলাইনে যাচাই করা যায় যেমন- জন্মসনদ, শিক্ষাসনদ, পিতা-মাতা ও স্বামী বা স্ত্রীর এনআইডি ইত্যাদি যাচাই করে নিবন্ধন ফরম-২ (যে ফরমে নাগরিকের সব তথ্য উল্লেখ করে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়)-এর তথ্যের সঙ্গে মিল আছে কি না, যাচাই করে দেখা যেতে পারে; নিবন্ধন ফরমে উল্লেখিত ঠিকানার সঙ্গে পিতা-মাতার এনআইডি এবং জন্মসনদের ঠিকানার মিল রয়েছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতে হবে।
(গ) নিবন্ধন ফরমে উল্লেখিত বয়সের সঙ্গে ব্যক্তির চেহারা বা শারীরিক অবয়বের মিল আছে কি না, তা দেখতে হবে।
(ঘ) যাচাই করে সঠিক পাওয়া গেলে নিবন্ধন ফরম এবং সংশ্লিষ্ট দলিলাদিতে চেকড অ্যান্ড ভেরিফায়েড (checked & verified) লিখে যিনি যাচাই করেছেন তার স্বাক্ষর ও সিল দেওয়া; এরপর রেজিস্টার অনুসারে ক্রমিক নম্বরে টিক চিহ্ন দিয়ে একইসঙ্গে নিবন্ধন ফরম-২ এ সংশ্লিষ্ট শনাক্তকারী, যাচাইকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের এনআইডি নম্বর (ভেরিফায়েড কি না নিশ্চিত হতে হবে) স্বাক্ষর, সিল (প্রযোজ্যক্ষেত্রে) আছে কি না, তা নিশ্চিত হয়েই কেবল উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার স্বাক্ষর (তারিখসহ) বা সিল দেবেন।
ফ্যাক্সিমিলি ব্যবহার করা হলে বিধিবহির্ভূত নিবন্ধনের আশঙ্কা দেখা দেবে। অবশ্য হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় অধিক সংখ্যক নিবন্ধন হয় বিধায় ফ্যাক্সিমিলি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। তবে অফিসে অবশ্যই অফিসার নিজে স্বাক্ষর বা সিল দেবেন। ওই রেজিস্টার অনুসারে সংশ্লিষ্ট ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার তথা রেজিস্ট্রেশন অফিসার ভোটারযোগ্য বা অসম্পূর্ণ আবেদন বা বাতিল বিবেচনা করলে রেজিস্টারে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করতে হবে।
(ঙ) এনআইডি সার্ভারে আপলোডের সময় উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসারের নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়। এক্ষেত্রে অফিসারের আবশ্যিকভাবে নিজের উপস্থিততে ওই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একান্তই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সহায়তা নিতে হলে তিনি সার্বক্ষণিক সার্ভারে সজাগ দৃষ্টি রেখে এ কাজ সম্পাদন করবেন। আপলোড শেষে লগ-আউট (log-out) নিশ্চিত করতে হবে।
(চ) যেদিন আপলোড কার্যক্রম চলবে, সেদিনই আপলোডের পর পর রিপোর্ট জেনারেট (Report Generate) করতে হবে এবং এগুলো মাসিক ভিত্তিতে পিডিএফ ও হার্ড কপি আকারে অফিস ফাইলে অফিসারের নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে হবে;
(ছ) পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন সংগ্রহের (সিস্টেমে সংখ্যাগত তথ্যাদি ইনপুট এবং রিপোর্ট অ্যাটাচমেন্ট) ব্যবস্থা করতে হবে। অধীনে থাকা অফিসগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অফিস পরিদর্শনের সময় এসব রিপোর্ট বা প্রতিবেদন দেখাতে হবে।
নির্দেশনায় সব উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার তথা রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ও জেলা নির্বাচন অফিসের মাসিক সমন্বয় সভায় বিধি মোতাবেক এবং সুচারুরূপে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বা সিনিয়র জেলা বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সরেজমিন অপারেটরদের কার্যক্রম অবলোকন করার জন্যও বলা হয়েছে।
এমন নির্দেশনার ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়বে কি-না, জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এখন নাগরিকদের ভোটার হতে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। নাগরিকরা যাতে ভোগান্তি ছাড়া ভোটার হতে পারেন সে বিষয়েই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির কিছু মাইনর লুপহোল ব্যবহার করে প্রতারকরা প্রতারণা করছে। প্রযুক্তি যখন আছে তখন প্রযুক্তির কিছু মিসিংও আছে। প্রযুক্তির মিসিংগুলো এড়াতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। নিবন্ধনের সময় বায়োমেট্রিক ভালো করে নিতে বলা হয়েছে। প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে, তবুও কিছু কিছু প্রতারক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রতারণা করছে।