সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বড় ভাই মশাহিদ মিয়ার হাতে ছোট বোন সালমা বেগম খুনের ঘটনায় বড় ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।১ ডিসেম্বর দুপুরে সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামি মশাহিদ মিয়া পলাতক রয়েছেন।
মামলা সুত্রে জানাযায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভরারগাঁও গ্রামের আজিজুর রহমানের মেয়ে সালমা বেগম স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। আজিজুর রহমান দিরাই বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট সকালে সালমা বেগমকে চরিত্রহীনা অখ্যাদিয়ে বড়ভাই মশাহিদ মিয়া প্রথমে কথাকাটাকাটি করেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সালমা বেগমের তিন বৎসরের মেয়ের সামনে মশাহিদ ছোট বোনকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। বসত ঘরের পেছনে গর্ত করে লাশ গুম করে। পরে বড়ভাই মশাহিদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীকে জানায় যে তার ছোটবোন সালমা বেগম বাড়ির কাউকে না বলে মামার বাড়িতে চলে গেছে। কিন্তু স্বজনরা মামার বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় খোজ খবর করে সালমা বেগমে কোন সন্ধান পায়নি। পরের দিন ২৫ আগস্ট সালমা বেগমের পিতা দিরাই থানায় একটি নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এঘটনার পর থেকে মশাহিদ বাড়িতে সটকে পড়েন। পালিয়ে যাওয়ার চার মাস পর সালমা বেগমের তিন বৎসরের মেয়ে তার নানা কে জানায় মামা মশাহিদ তার মাকে খুন করে বসত ঘরের পেছনে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। সাধারণ ডায়েরির ৪ মাস পর পুত্র মশাহিদের কথাবর্তায় সন্দেহ হলে মশাহিদ মিয়াকে আসামি করে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিরাই থানার রুপো কর শুরুতে মামলার তদন্ত করে একমাত্র আসামি মশাহিদ মিয়াকে গ্রেফতার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুন ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধারের অভিযান চালিয়ে বসত ঘরের পেছনের গর্ত থেকে নিহত সালমা বেগমের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এঘটনায় আদালতে মশাহিদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে সে পলাতক হয়ে যায়। মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সামছুল হক ২৩ মে ২০১৫ তারিখে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। আদালতের বিচারক ১৩ জনের স্বাক্ষ্য ও অন্যান্যা প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার এরায় ঘোষণা করেন। জামিন নিয়ে পলাতক থাকার কারণে তাকে আরও ৭ বৎসরের কারাদন্ড প্রদান করেন বিচারক। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সোহেল আহমদ ছইল মিয়া দিরাইয়ে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট বোন খুনের ঘটনায় আদালত একমাত্র পলাতক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। আসামী পক্ষের আইনজীবি হুমায়ন মঞ্জুর চৌধুরী জানান, ভাইয়ের হাতে বোন খুনের ঘটনায় আসামি পক্ষ আদালতে ন্যায় বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল করবে আসামি পক্ষ। অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ বিকেলে দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাও ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের পয়েন্ট থেকে ৩ হাজার ৯৭০ পিচ ইয়াবাসহ ভারতীয় নাগরিক লিটন দাস, সুরঞ্জিত দাস, সাদব দাস কে আটক করে র্যাব। তারা ভারতের মেঘালয় জেলার সাইগ্রাফ থানার কালাটেক গ্রামের বাসিন্দা। এঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে দোয়ারাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করে। র্যাবের দায়েরকৃত মামলায় তিন আসামিকে ৭ বৎসরের কারাদন্ড প্রদান করেন আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মহিউদ্দিন মুরাদ।