মাসুক আলতাফ চৌধুরী
থামছেই না ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাই- ডাকাতি। পরবি তো পর মালির ঘাড়ে- অতিসম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তা ছিনতাইয়ের কবলে পরে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তাঁর ওপর হামলাও হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। তিনি অন্যত্র চাকুরি করেন।
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন পরপরই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি হামলায় আহত হচ্ছেন অনেকে,খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। জখম- খুন এটাই মারাত্মক। স্বেচ্ছায় কে বা দিতে চায় সব, অবস্থা বেগতিক দেখে দিয়ে দিলেও নিস্তার নেই। কারণ শুরুই হয় আতংক দিয়ে। সব দিয়ে দেয়ার আগেই শুরু করে ছুরি- চাপাতি- দা চালোনা। ভয় ছড়ানো ও দ্রুত অপারেশন শেষ করতেই এ কৌশল। কিন্তু এর ফল- মারাত্মক জখম,পঙ্গুত্বসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি,কখনো শেষ পরিণতি-খুন বা চিকিৎসাধীন মৃত্যু । মহাসড়কে সহজে চিকিৎসাও মিলে না। ভুক্তভোগীরা মামলা- থানা-পুলিশে জড়াতে চান না। সব মিলে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ মহাসড়ক।
এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস,কার,মাইক্রো ও সিএনজি চালকরাও। শিল্পকারখানার পণ্যবাহী গাড়ি ও প্রবাস ফেরত যাত্রীই এদের মূল টার্গেট। দ্বিতীয়ত, প্রাইভেট কার ও নিজ মাইক্রোবাসের যাত্রী।
রমজান-ঈদ আর শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাত এ অপরাধের ভরা মৌসুম। এখন আগ মৌসুম চলছে। কোরবানির ঈদও মৌসুম। আর যানজট লাগলে ‘থাবাপার্টি’র- ছিনতাই বাড়ে। এমনিতেই ‘মলমপার্টি’ সক্রিয়। ‘পানপার্টি’র পান খেয়ে অজ্ঞান হওয়াদের জ্ঞান ফিরতে চিকিৎসা লাগে।এসবের অবশ্য রাত-দিন নেই।
আগে হাইওয়ে পুলিশ ছিল না। এখন থানা,হাইওয়ে, ফাঁড়ি সবাই মিলেও যেন পেরে উঠছে না। টহল,নজরদারি সবই বেড়েছে, গ্রেফতার অব্যাহত আছে, অস্ত্র উদ্ধার, মামলা, আসামি গ্রেফতার সবই হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাও ঘটছে, জন আতংকও বাড়ছে। আটকে গেছেন, ফিরতে বা যেতেই হবে- রাতের ভ্রমণ, মানেই বিভীষিকা।
ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় চোখ বুলাই। মহাসড়কের পাশের গাছ কেটে ফেলে ডাকাতি। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতি, ফাঁদ পেতে- এলোপাতাড়ি গাড়ি ফেলে রেখে ডাকাতি, চলন্তগাড়িতে ইট- পাথর ছুঁড়ে, রড ছুঁড়ে মেরে গতিরোধ করে থামিয়ে ডাকাতি।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩ টায় মহাসড়কের ঢাকা অংশে মাদানীনগর এলাকায় আল- আমীন গার্মেন্টসের সামনে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন এক সেনা সদস্য। পরে অবশ্য আসামীদের ধরেছে পুলিশ।
১৭ জেলার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে এ ২৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক দিয়ে। এক হিসেবে পণ্য বোঝাই ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ প্রায় ৪০ হাজার যান- বাহন নিয়মিত চলাচল করে।
মহাসড়কের অপরাধপ্রবণ এলাকাকে প্রধানত ৪ ভাগ করা যায়। ঢাকা থেকে- ঢাকার অংশে শনিরআখড়া, নারায়ণগঞ্জ অংশে চিটাগাংরোড- সাইনবোর্ড, সানারপাড়,শিমরাইল মোড়,সোনারগাঁও ।
কাঁচপুর অংশে কিউট পল্লী,চেঙ্গাইন,দড়িকান্দি, মুন্সিগঞ্জ গজারিয়ার ইস্পানিরচর,ভবেরচর,আষাঢ়িয়ারচর ব্রীজ, মোগরাপাড়া, সোনারগাঁওয়ের মেঘনা ঘাট।
কুমিল্লা অংশে দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনার মাইজখার,মাধাইয়া, বাগুর। মিয়ারবাজার,চৌদ্দগ্রাম।
মিরসরাই অংশে ছোটকমলদহ, হাদি ফকিরহাট, নিজামপুর ও ডাকঘর এলাকা, নরদুয়ারিয়া উল্লেখযোগ্য। শুধু এলাকা নয় স্পটও চিহ্নিত রয়েছে।
শুধু তাই নয় এসব এলাকার ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের চিহ্নিত করা আছে। গত দুই বছরের অপরাধ বিবেচনায় মূলহোতাদের চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি থানা ও হাইওয়ে পুলিশ। থানা-ফাঁড়ি ও হাইওয়ে পুলিশের মধ্যে কোথাও কোথাও সমন্বয়ও হয়েছে।
রাতের আধারে ডাকাতরা যাতে মহাসড়কের পাশের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতে না পারে সে জন্যে মিরসরাই ও দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ ঝোপঝাড়ও পরিষ্কার করেছে।
মহাসড়কের নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা জোন ঢাকার শনিরআখড়া থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত। পুরো মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রকল্প শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝিতে। ৪৯০ টি পুলে দেড় হাজার ক্যামেরা থাকবে। আগামী বছর এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অগ্রগতিতে ঢিমেতাল। তাই সুফল এখনও আসছে না। কারণ এই মনিটরিং সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেলে যে কোন দুর্ঘটনার খবর সাথে সাথে জানাজানি হবে,দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াও যাবে। পুরো মহাসড়কই নজরদারিতে থাকবে। নিয়মিত টহল, পুলিশী ব্যবস্থা সবই মনিটর করা যাবে। ছিনতাই,ডাকাতি,চুরি কমে আসবে। দূর্ঘটনাও কমবে। মোবাইল ফোনে অপরাধ জানানো যাবে। ৯৯৯ সার্ভিসও যগপৎ ভাবে কাজ করবে। কিন্তু দেরি কেন, কবে শেষ হবে? তার চেয়ে বড়কথা প্রকল্প বাস্তবায়নে অভাব রয়েছে আন্তরিকতার।
শীত মৌসুমে কুয়াশার রাতে যেহেতু মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি বাড়ে তাই আসছে শীতে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ সাড়াশি অভিযানের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা প্রয়োজন। অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা দরকার। এখনতো জনবল ও গাড়ি দু’টোই বেড়েছে। নিজস্ব থানা- ফাঁড়িও হচ্ছে। মহাসড়ককে নিরাপদ করে তোলা প্রয়োজন নয় কি? মনোযোগ প্রয়োজন।
লেখকঃ সাংবাদিক। কুমিল্লা। ৫ অক্টোবর ২০২২ বুধবার। (তথ্য সূত্র-ফেইসবুক)