স্পোর্টস ডেস্ক :
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সমাপ্তি হতে চলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবময় আরও এক অধ্যায়ের। আগামী মাসে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরের ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায়ের ঘোষণা দিলেন সাকিব আল হাসান।
কানপুরে শুক্রবার ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামার আগের দিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা এই ক্রিকেটার। ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী বছরের শুরুতে পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলে ওয়ানডেকে বিদায় বলার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে খেলা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’
এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান সাকিব। তিনি যোগ করেন, ‘এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।’
সাম্প্রতিক বাজে ফর্ম, অনেক আলোচনা-সমালোচনা, মামলা-মকাদ্দমা গত কয়েক মাসে অনেক কিছুই হয়েছে সাকিবকে নিয়ে। আরওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের সাথে হারিয়েছেন সংসদ সদস্য পদও। সব মিলিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিবের। যদিও কঠিন এই সময়ে সতীর্থদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। তবে কোনো কষ্ট বা অভিমান থেকে অবসরে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সাকিব।
‘কষ্ট কিংবা অভিমান থেকে নেওয়া নয়। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়, সরে যাওয়ার জন্য এবং নতুনদের আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।’সেই সাথে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন সাকিব। তবে দলের প্রয়োজনে ফিরতে প্রস্তুত বলেও জানিয়ে রাখলেন তিনি।
‘অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি সরে যাই। আপাতত পরের যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, সুযোগ দেওয়া হোক।’
‘আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস–এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে যদি আমার টি-টোয়েন্টিকে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, দেন আমরা ডিসাইড করতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে, নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার ইচ্ছা আছে টেস্টে শেষ সিরিজ হওয়ার। মোটামুটি বলতে পারেন আমি অন্তুত দুটি সংস্করণে আমি আমার শেষটা দেখছি।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বলেও জানান সাকিব।
‘আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে।’
পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়েই কি ওয়ানডেকেও বিদায় বলবেন সাকিব? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তা-ই আশা করি। তো আর হয়তো ৯টা ওয়ানডে।’
নিজের ক্যারিয়ারকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি রিজনেবলি ওকে করেছি। আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনও অনুশোচনা ছিল না। এখনও নেই। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়। যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড- সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
দেশে নিরাপত্তা ঝুকির বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোন সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’