আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সে ব্যাপারে রোববার সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি জানান, অক্টোবরে তফশিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণ ডিসেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য নির্বাচনের সময় জানা গেলেও কোন সরকারের অধীনে তা অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। সংলাপের কোনো লক্ষণ মিলছে না, বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে রাজপথ কাঁপাতে দেখা যাচ্ছে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা তো পাওয়া যাচ্ছেই না, বরং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে জনগণের আস্থায় ভাটা পড়েছে। রাজধানীতে দুদলের রাজনৈতিক পালটাপালটি কর্মসূচিকে ঘিরে এতদিন জনমনে যে শঙ্কা কাজ করছিল, তার বাস্তব রূপ মিলেছে শনিবার। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এদিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘাতের দৃশ্য দেখেছে দেশবাসী। এদিন রাজধানীর উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ের কাছে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। ঈগল পরিবহণের বাসটিতে কারা আগুন দিয়েছে, সে সম্পর্কে অবশ্য কোনো তথ্য জানা যায়নি।
শুক্রবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে অনেকের মনে আশঙ্কা থাকলেও সেদিন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। সংঘাতের চিত্র দেখা দেয় পরদিন। বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের আগে থেকেই বেশ প্রস্তুতি ছিল। গাজীপুরের টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর সংযোগস্থলে পুলিশকে ব্যাপক তল্লাশি চালাতে দেখা যায়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রী সাধারণ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। পুলিশের বারণে টঙ্গীবাজার তুরাগ নদের গুদারাঘাটের মাঝিরা যাত্রী পাড় করতে না পেরে অলস সময় পাড় করেছেন বলেও জানা গেছে।
যাহোক, নির্বাচনকে নিজেদের মতো করে অনুষ্ঠানের জন্য একদিকে বিএনপি ‘ফয়সালা রাজপথেই হবে’ বলে হুংকার ছাড়ছে। অপরদিকে, চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইলে বিরোধীদের ‘চলার পথ বন্ধে’র পালটা হুমকিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিচ্ছে। দুদলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে এ পরিস্থিতি যেন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ অবস্থায় পৌঁছেছে। অবশ্য সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের হঠাৎ অসুস্থতা এবং অপর নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুলিশি পিটুনির পরের ঘটনায় রাজনৈতিক শিষ্টাচারের নজিরও এদিন দেখেছে দেশবাসী। আমান উল্লাহ আমান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এবং ফল পাঠানোর ঘটনা যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই ডিবি অফিসে গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মধ্যাহ্নভোজনের ছবিও অনেকের কাছেই ছিল আলোচনার বিষয়। এমন দৃশ্য নিকট অতীতে যেমন দেখা যায়নি, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমানেও ছিল কল্পনার অতীত।
মনে রাখতে হবে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল হিসাবে দুদল যখন রাজধানীকে বেছে নিয়েছে, নগরবাসীকে তখন ডেঙ্গুজ্বরের মতো প্রতিষেধকহীন বিপর্যয়কে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে একদিকে রোগীরা ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়ছেন, অপরদিকে তাদের স্বজনরা হাসপাতালে রোগীর পাশে থেকে প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাসা-কর্মস্থলও সামলাচ্ছেন। এতে তাদেরও রাজধানীতে চলাচল বেড়েছে। এ অবস্থায় রাজধানীকেই রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের কেন্দ্রে পরিণত না করে বরং সংঘাতহীন, সমঝোতাভিত্তিক পন্থায় আসন্ন নির্বাচনকে কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করে দেশ-বিদেশের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো সেদিকে মনোযোগী হবে-এটাই প্রত্যাশা।