খুলনা প্রতিনিধি:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই, বিসিবির সাবেক পরিচালক এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের প্রভাবে মামলায় ফাঁসানো হতো নিরীহ পরিবারকে। নগরীর বসুপাড়া এলাকায় আরিফুল ইসলাম প্রিতমকে তার প্রভাবে জড়ানো হয়েছিল ধর্ষণ মামলায়। মামলাটিতে মেডিকেল পরীক্ষা থেকে শুরু করে ঘটনাস্থলের কোনো ভিডিও ফুটেজে প্রিতমের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলেও তাকে শোনানো হয়েছে ফাঁসির রায়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আরিফুল ইসলাম প্রিতমের স্ত্রী সাজিয়া হক।
এ সময় প্রিতমের স্ত্রী বলেন, গত ২০১৯ সালের ২৯ জুন আমাদের মহল্লায় (বসুপাড়া বিহারী কলোনি) একটা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরের দিন সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলার আবেদন করে ভিকটিম সোনালী আক্তার স্বর্ণা। সেই আবেদনে শান্ত, নুরুন্নবী, শাহাদাৎ, মিম, মইন, আকাশের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে পরবর্তীতে মূল মামলার নথিতে হঠাৎ করে দেখা যায় প্রিতমের নাম। সেখানে তার বাবার নামও উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাত বলা হয়েছে। পরে শেখ পরিবারের শেখ সোহেলের প্রভাব খাটিয়ে উল্লেখিত আওয়ামী লীগ নেতারা এ মামলার রায় বের করে। সেই রায়ে আমার স্বামীসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক আ. সালাম খান।
তিনি আরও বলেন, তার শ্বশুরবাড়ির পরিবার বিএনপিপন্থি হওয়ার কারণে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে প্রিতমের পরিবারকে ভোট না দিতে দেওয়ায় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তাকে ফাঁসানো হয় এ মামলায়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সওকত, সোহেলসহ তাদের সহযোগীরা কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের মাধ্যমে এ মামলায় তার স্বামীকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিনি এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তসহ সঠিক বিচারের দাবি জানান প্রিতমের স্ত্রী। এ সংবাদ সম্মেলনে প্রিতমের মা, চাচাসহ পরিবারের বেশ কিছু সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমের স্ত্রী জানান, আমার স্বামী আরিফুল ইসলাম প্রিতম ঘটনার দিন আমার সঙ্গেই ছিল। এ মামলার কোনো তথ্যে তার বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ নেই। মেডিকেল সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ কোনো জায়গায় আমার স্বামীকে দেখা যায়নি। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা সরাসরি আমার কাছে স্বীকার করেছে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এ মামলায় প্রিতমকে জড়ানো হয়েছে। তার ভিডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। তাহলে কেন তাকে ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে? আমি চাই আবারো এ মামলার তদন্ত হোক। সত্য বেরিয়ে আসুক। ক্ষমতাবলে প্রভাবিত হয়ে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করে পুনরায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রায় দেওয়ার জন্য আবেদন জানান তিনি।
এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া হয় ‘আমাকে কি দ্রুত ফাঁসি দেওয়া যায় না?’ এই শিরোনামে জেল থেকে প্রিতমের লেখা একটি খোলা চিঠি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত সরকারের কিছু লোভাতুর মানুষের লালসার বলি হয়েছে সে। নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু ঝামেলার জের ধরে এ মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার বাদীকে দিয়ে অপরাধীদের সঙ্গে কিছু নিরপরাধ মানুষকে জড়িয়ে মামলা করে। তাহলে ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলে বাদীকে আশ্বস্ত করে তারা।
তিনি জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আমার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই বার্তার মাধ্যমে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনঃতদন্তসাপেক্ষে পুনর্বিচারের ব্যবস্থা করলে নিরপরাধ মানুষগুলো ন্যায়বিচার পাবেন।