মো:আলমগীর হোসেন বাচ্চু(কুমিল্লা):
কুমিল্লার তৃতীয় ধাপে চার উপজেলাতেই কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপির অনুসারী প্রার্থীরা সহজ জয় পেয়েছে। এদের মধ্যে তিন জন হচ্ছেন স্ব স্ব এলাকার বর্তমান এমপির স্বজন। বুধবার এসব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। উপজেলা চারটি হলো মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং।
মুরাদনগরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র ড. এহসানুল আলম সরকার কিশোর, দেবিদ্বারে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মামুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণপাড়ায় নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান এমপি আলহাজ্ব আবু জাহেরের ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব অপি এবং বুড়িচং এ জয়ী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার। এতে চেয়ারম্যান লীগ সমর্থিত তিন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের স্বজনেরা (ছেলে, ভাই ও ভাতিজা) নির্বাচিত হন।
এর বাইরে দলটির প্রভাবশালী পরিবারের দুই ভাই ও মা- মেয়ে ভোটের মাঠে ছিলেন। তাঁরা চাইছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব নিজেদের পরিবারের মধ্যে রাখতে। ফলে চারটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যেই ভোটের লড়াইয়ে রুপ নেয়। এবারের ভোটকে পরিবারগুলোর মর্যাদার লড়াই হিসেবে মনে করেছেন ভোটাররা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মুরাদনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী ছিলেন। তাঁরা হলেন আহসানুল আলম সরকার কিশোর (আনারস প্রতীক), গোলাম সারওয়ার চিনু (ঘোড়া প্রতীক), বসির আহম্মদ কুমিল্লায় তিন উপজেলায় জয়ী এমপির স্বজনরা
(কাপ-পিরিচ প্রতীক) ও রাশেদ আলম হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)।
চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আহসানুল আলম সরকার কিশোর ৮৬ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এ উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী গোলাম সারোয়ার চিনু ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ১৪শ ০২ ভোট। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী সাহিন ৫৪ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এডভোকেট ফয়সাল চশমা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ২২ হাজার ১৭৭ ভোট।
উপজেলা সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নূরজাহান মজুমদার ৫৫ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সানোয়ারা বেগম লুনা সেলাই মেশিন প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৪৬ ভোট।
এদিকে দেবীদ্বার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুই পরিবারের তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. মামুনুর রশিদ, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শাহিদা আক্তার ও দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশন।
কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সদস্য। মো. মামুনুর রশিদ আনারস প্রতীক নিয়ে ৩,৮১,৭৪৬ জন ভোটারের মাঝে ৯২ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো, রোশন আলী মাষ্টারের স্ত্রী সাহিলা আক্তার ঘোড়া প্রতীকেকর প্রার্থী পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৮০ ভোট। কন্যা
দোয়াত কলম প্রতীকের খাদিজা বিনতে
রোশন পেয়েছেন-৩০৩ ভোট।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ লক্ষ ২ হাজার ২২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন টিউবওয়েল প্রতীকের মোঃ আবদুল্লাহ আল-কাইয়ুম। তার নিকটতম প্রার্থী চশমা প্রতীকের এটিএম সাইদুল ইসলাম মাসুম পেয়েছেন ১২ হাজার ১১১ ভোট। অপর আরো ২ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাইক প্রতীকের মোঃ সোলেমান কবির খান গেয়েছেন ৫ হাজার ৭৫৫ ভোট ও টিয়া পাখী প্রতীকের এডভোকেট মো, মামুনুর রশিদ ২ হাজার ৪০৮ কোটি।
মহিলা ভাইস ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন শাহিনুর আক্তার লিপি। তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮৭ হাজার ২৯৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী দু’বারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড, নাজমা বেগম প্রজাপতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৯৯৯ ভোট।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। চেয়ারম্যান পদে গড়েন চার প্রার্থী। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তৈয়ব অপি (ঘোড়া প্রতীক), সোহরাব খান চৌধুরী (আনারস প্রতীক), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও সরকার জহিরুল হক (টেলিফোন প্রতীক)। তাদের মধ্যে শুধু জহিরুল হক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাকি তিন প্রার্থী অাওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নির্বাচনে আবু তৈয়ব অপি ঘোড়া প্রারীকে ৪৩.৬৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি সোহরাব খান চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৩১,৪৭০ ভোট পেয়েছেন, মো: আমিনুল ইসলাম দোয়াত কলম ১,৮৮৮ ভোট
পেয়েছেন, সরকার জহিরুল হক মিঠুন
টেলিফোন প্রতীকে ৪.১১৮ ভোট পেয়েছেন। আবু তৈয়ব অপির চাচা কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাশ সম্পাদক এম এ জাহের। জাহেরের বড় ভাই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মুহাম্মদ আবু তাহেরের ছেলে আবু তৈয়ব অপি। আবু তৈয়ব। অপি কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুল হাসান শরীফ চশমা প্রতীকে ২৬,১৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মোঃ অপু তালা প্রতীকে ২৫,৫২৬ ভোট পেয়েছেন, আবু মুছা টিয়া পাখি প্রতীকে ১৩,৩২৩ ভোট পেয়েছেন, সৈয়দ মেহেদী হাসান মাইক প্রতীকে ৬,৮৭১ ভোট পেয়েছেন, মোঃ আকরামুল ইসলাম টিউবওয়েল প্রতীকে ৪.৫১৪ ভোট পেয়েছেন, মাসুক সরকার বই প্রতীকে ৩,৫০৭ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোসা: তাহমিনা হক হাঁস প্রতীকে ৩৫,৪০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাহান আরা বেগম কলস প্রতীকে ২৪.৬১৭ ভোট পেয়েছেন,
শামীমা আক্তার চৌধুরী ফুটবল প্রতীকে
১৮.৩৬০ ভোট পেয়েছেন
এদিকে বুড়িচং উপজেলার ১২১টি ভোট কেন্দ্রের সার্বিক ফলাফলে বুড়িচং উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার (ঘোড়া প্রতীক) নিয়ে ৩৭৭৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. বাছির খাঁন আনারস। পেয়েছেন ২৫৪৫৩ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. জসীম উদ্দিন (মাইক প্রতীক) পেয়েছেন ৪৯০৯৫ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা পরিষদের মাবেক সদস্য মোলা, লাভলী আক্তার (ফুটবল) প্রতীক ৫৪০৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে তৃতীয় ধাপে কুমিল্লার এই ৪ উপজেলায় মহানগর আওয়ামী লীগ আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি যে ৪ প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন তারাই বিজয়ী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত এমপি বাহারের সুনিপুণ নির্বাচনী কৌশল কাজে লাগিয়ে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা এবং ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন। যার ফলে তারা ভোটের মাঠে বিজয়ী হয়ে এসেছেন।