নিজস্ব প্রতিবেদক;
কুমিল্লা আদর্শ সদরের ১নং কালির বাজার ইউপি’র ইউনিয়নের ধনুয়াখলা গ্রামে তিন ফসলের আবাদি কৃষি জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগে কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী এক কৃষক। এছাড়াও ধনুয়াখলা গ্রামের আশেপাশের তিন ফসলী কৃষি জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি উত্তলন করে আবাদি জমি ভরাট করতে দেখা গেছে।
ধনুয়াখলা গ্রামের ডাক্তার বাড়ি এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক সফিক মিয়া ও শরিফ হোসেনের লিখিত অভিযোগ, নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশ, স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে ইউনিয়নের একটি মাটি খেকো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আবাদি জমির মাটি লুটের উৎসবে মেতে ওঠে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় মাটি খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে, মাটি বিক্রি করতে না চাইলে প্রভাব খাটিয়ে কিংবা ভয় ভীতি দেখিয়ে নানা ভাবে দরিদ্র কৃষকদের আবাদী জমির ওপরের (টপ সয়েল) উর্বর মাটি কেটে ব্রিকস ফিল্ড গুলোতে বিক্রি করে। বিশেষ করে ধনুয়াখলা কমলাপুর বল্লাবপুর আনন্দপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ তিন ফসলের আবাদি জমির মাটি কাটায় জড়িত সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কৃষকরা ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করতে চান না। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে মাটিখেকো সিন্ডিকেট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলের জমির বুকে তান্ডব চালায় ড্রেজার মেশিন, ভেকু ও কোদালে। কৃষকদের বাঁধা উপেক্ষা করে আশেপাশের ব্রিকসফিল্ড মালিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে।
ভুক্তভোগী কৃষক সফিক মিয়ার অভিযোগ, কালির বাজারের বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম এর প্রভাব দেখিয়ে, ধনুয়াখলা গ্রামের মাটিখেকো জসিম ও মোহাম্মদ আলী সহ তাদের সহযোগীরা ১৫ ডিসেম্বর সকালে মাটি কাটা শ্রমিকদের নিয়ে তার জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করে। এসময় জমির মালিক জমির কাছে এলে তাকে মারধর সহ মিথ্যা মামলায় হয়রানী করবে বলে প্রকাশ্য হুমকি দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধনুয়াখলা বাজারের দক্ষিণ পূর্ব দিকের তিন ফসলের জমির মাঝে গভীর গর্ত করে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তলন করা হচ্ছে। এসময় ছবি ও ভিডিও ধারন করতে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জমি ও ড্রেজার দাবি করে প্রতিবেদককে ছবি তুলতে নিষেধ করেন ইউনিয়নের মাটি খেকো সিন্ডিকেটের হোতা আলম মিয়া নামের জনৈক ব্যক্তি। আশেপাশে কৃষি জমির মালিকরা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে, অভিযোগ করে বলেন, গভীর গর্ত করে ড্রেজারে মাটি কাটার ফলে আশেপাশে জমিগুলো ডেবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী তাই বাঁধা দিলে বিপত্তি আরো বাড়তে পারে সেই ভয়ে লিখিত অভিযোগ করছেন না বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কোতয়ালী থানাধীন নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশ ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধনুয়াখলা এলাকায় কৃষি জমি থেকে মটিকাটার বিষয়ে একটি লিখত অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাৎক্ষণিক ভাবে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এলাকার খেটে খাওয়া ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে কৃষি কাজ করতে সকলকে উৎসাহিত করছে, সেখানে এলাকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দাপট দেখিয়ে মাটি খেকো সিন্ডিকেট তিন ফসলের জমির মাটি লুটকরে আবাদি জমিগুলো নষ্ট করছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, উজার হচ্ছে কৃষি জমি কমছে চাষাবাদ। তাছাড়া ট্রাক্টরের চাকা ও ইঞ্জিনের শব্দে রাতে সড়কের পাশের বাড়িঘরে ঘুমানো যায় না। পাকা আধাপাকা রাস্তা ঘাট গুলো নষ্ট হচ্ছে। তাই মাটি খেকো সিন্ডিকেটের হাত থেকে কৃষক, কৃষি জমি, পরিবেশ ও সড়ক রক্ষায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট মহলের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন কৃষক ও এলাকাবাসী।
কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস সূত্র জানায়, এবিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই কৃষি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তলন ও ভেকু বা কোদালে আবাদি ও কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।