রাজশাহী প্রতিনিধি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর রাজশাহীর তানোর উপজেলা ও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। যার ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের আদেশ বলে জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে এসব জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তানোর ও মুন্ডুমালা পৌরসভা ছাড়াও ওই উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে পৃথক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রশাসকরা দাপ্তরিক কাজ নিয়মিত না করার ফলে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না স্থানীয় জনসাধারণ। জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা জরুরি কাজে নিয়মিতই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তানোর উপজেলায় মোট সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা রয়েছে। এরমধ্যে দুই পৌরসভা এক ইউনিয়নে মেয়র আর চেয়ারম্যানদের সড়িয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে বেশ কয়েকটি ইউপিতে চেয়ারম্যানরা নিয়মিত পরিষদে না বসলেও জরুরি প্রয়োজনে হঠাৎ দপ্তরে বা কোনো নিরাপদ স্থানে গিয়ে বিল, ভাউচার, বেতন ইত্যাদি কাগজপত্রে স্বাক্ষর দিচ্ছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্বে নিয়োজিত ইউএনওকে মাঝে মধ্যে পৌর অফিস করতে দেখা গেছে। কিন্তু মুন্ডুমালা পৌরসভা ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে প্রশাসকের দায়িত্বে নিয়োজিত এসিল্যান্ড মাশতুরা আমিনাকে পরিষদে তেমন একটা আসতে দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে পৌর পরিষদে বসলেও ইউনিয়ন পরিষদে দাপ্তরিক কাজ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট পৌর সচিব ও ইউপি সচিব ছাড়াও অন্যান্য কমকর্তারা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে এসিল্যান্ডের স্বাক্ষর নেয় তারা। এতে নাগরিকরা চরম হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ভোগান্তির কথা জানিয়ে উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির বেড়লপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রোকসানা বিবি জানান, আমার স্বামী দুইজনের কাছ থেকে বিভিন্ন দাগে জমি ক্রয় করে। এখন ওই জমিটি খারিজ করার জন্য ওয়ারিশ সনদ উত্তোলনে ব্যাপারে বেশ কিছু ধরেই ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছে। কিন্তু পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুরকে বরখাস্ত করায় ইউনিয়ন প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন এসিল্যান্ড। এ কারণে পাচ্ছেন না ওয়ারিশ সনদ।
তিনি আরও জানান, জমি বিক্রি করার পর দলিলের দাতা এবং তার ওয়ারিশরাও মারা গেছে। আবার কেউ জীবিত আছে। যারা মারা গেছে, তাদের মৃত্যু সনদ প্রয়োজন। যার কারণে স্থানীয় মেম্বারের লিখিত সুপারিশ নিয়ে ওয়ারিশ সনদ নিতে গেলে মৃত ব্যক্তির এনআইডি ও মৃত্যু সনদ দাবি করেন ইউনিয়ন প্রশাসকের দায়িত্বরত এসিল্যান্ড মাশতুরা আমিনা। পরে ওয়ারিশদের এনআইডির ফটোকপি সংগ্রহে গেলে কেউ এনআইডি দিয়েছেন, আবার কেউ দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন প্রশাসককে অবহিত করা হলে মৃত ব্যক্তির এনআইডি ছাড়া ওয়ারিশ সনদ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় ইউনিয়ন প্রশাসক। জমি ক্রয়ের ৪০ বছর পর খারিজ করতে যদি এভাবে হয়রানি হতে হয় তাহলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে আক্ষেপ করেন রোকসানা বিবি।
মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চিনাশো মহল্লার নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক আরেক বাসিন্দা জানান, প্রশাসককে বরখাস্ত করার পর বিভিন্ন কাজে হয়রানি ও বিড়ম্বনায় পড়েছে পৌরবাসী। তিনি দেড় মাস ঘুরেও পাননি ওয়ারিশ সনদ। দোকানের ট্রেড লাইসেন্সও নিতে পারছেন না অনেকে। তার মত আরও অনেকে একই সমস্যা নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। ফলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ন্যায় সংগত কাজে গিয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। এতে ইউনিয়ন ও পৌর প্রশাসকের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভা ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে প্রশাসকের দায়িত্বে নিয়োজিত তানোর এসিল্যান্ড মাশতুরা আমিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, ওয়ারিশ সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তিসহ জরুরি কাজে নাগরিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার বলেন, মুন্ডুমালা পৌরসভা ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে প্রশাসক দ্বারা যদি নাগরিক সেবায় কেউ হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।