খুলনা প্রতিনিধি:
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছেন কয়রার অনেক মানুষ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ শেষ করে অনেকেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথায় ঘুরবে এমন জায়গা বেছে নেওয়া মুশকিল। তাই একটু বিনোদনের জায়গা হিসাবে সুন্দরবন সংলগ্ন কাটকাটা লঞ্চঘাটে মানুষের পদচারনায় ছিল মুখরিত।
একটু হিমেল বাতাস খেতে আর নদীর পাড় থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কাটকাটা লঞ্চঘাটে হাজির হয় শত শত মানুষ। মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। এ অঞ্চলের মানুষের ধারনা ইতোপূর্বে কখনো এই এলাকায় এত মানুষ তারা দেখেনি।
শুধু কয়রার মানুষ নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে এখানে ছুটে এসেছে কপোতাক্ষ আর শাকবাড়িয়া নদী দেখার পাশাপাশি সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে এবার প্রস্তুতি ছিল সুন্দরবন।
খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের অন্যতম পর্যটন স্পট হলো শেখের টেক, কালাবগী ইকোট্যুরিযম কেন্দ্র, নির্মাণাধীন কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, শিবসা নদীর তীরে রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, ৪০০ বছর আগের স্থাপনা, নীলকমল, কাটকাটা পর্যটন স্পট।
কাটকাটা এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক তাজমিনুর বলেন, এবার ঈদে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে কাটকাটা লঞ্চঘাট থেকে খুব কম সময়ে একদিনের জন্য সুন্দরবনের শেখের টেক, শিবসা নদীর তীরে রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, গব বাগান, গহীন সুন্দরবনের শেখের খাল ও বনের মধ্যে ৪০০ বছরের পুরনো স্থাপনা ও সুন্দরবনের নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, খুলনা জেলা শহর থেকে এসে চুকনগর- পাইকগাছা হয়ে কয়রা থেকে খুব কম সময়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। কয়রায় নির্মাণাধীন একমাত্র পর্যটন স্পট কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের দার আরও উন্মোচিত হবে।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, কাটকাটার পাশাপাশি কয়রা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ৬নং কয়রা গ্রামে প্রস্তাবিত কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কাজ ইতিমধ্যে চলমান আছে। এখানে গেলে পর্যটকরা পর্যটন স্পটের গাঁ ঘেঁসে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক (উপজাতি) সম্প্রদায়ের কালচার সম্পর্কে জানতে পারবে।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার কাটকাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টে ঈদকে সামনে রেখে সাজসজ্জায় রেখেছে ভরপুর।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাহিদ হাসান বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে পেরেছি। যাতে পর্যটকরা এসে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে আসতে পারে। এ বছর প্রচুর বেচাকেনা হয়েছে। অন্য বারের তুলনায় এবার সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক এসেছে অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, কয়রার কাটকাটা লঞ্চঘাট থেকে সুন্দরবনের শেখের টেক ও কালাবগী ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রগুলো থেকে সহজে একদিনের মধ্যে ভ্রমণ করা সম্ভব হওয়ায় লোকজনের সমাগম বেশি ছিল।
কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম আব্দুল মালেক বলেন, দেশের সর্ব দক্ষিণে খুলনার কয়রায় পর্যটন শিল্পের অপর সম্ভাবনা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার কারণে পর্যটকরা জানে না যে এই অঞ্চল দিয়ে খুব সহজে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সেটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুলনা জেলা শহর থেকে পর্যটকরা মাত্র চার ঘণ্টায় কয়রার পর্যটন স্পটগুলোতে পৌঁছাতে পেরেছে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ও ভালো মানের হোটেল এবং আবাসিক হোটেল স্থাপন করা গেলে পর্যটকের সাড়া পড়তো পর্যাপ্ত। পাশাপাশি সরাসরি বাস (গেটলক) সার্ভিস কাটকাটা থেকে চালু করা যায় তাহলে আরও কম সময়ে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন।
কাটকাটা রিভার ভিউ ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। তবে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণে ব্যাপক লোকজনের সমাগম ঘটেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্রলার বুকিং দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন ঘুরতে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী শেখ রিপন বলেন, এবার ঈদের ছুটিতে আগেভাগে তাদের স্পিডবোট, ট্রলার বুকিং হয়ে যায়।
ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহ দেখে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার সুন্দরবনের কাটকাটা এলাকায় অনেক বেশি পর্যটকের উপস্থিত ছিল।