লতিফুরঃ রহমান রাজু.সুনামগঞ্জ:
শেষ মুহুর্তের প্রচার প্রচারনায় বেশ জমে উঠেছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেননা প্রার্থীরা। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে কে হচ্ছেন আগামির কাণ্ডারি। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সরগরম ভোটের হিসাব নিকাশ নিয়ে।
এ উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। ৫জন প্রার্থী হলেও আলোচনায় রয়েছেন ৪ জন।সমানতালে প্রচারনা যেমন চালিয়ে যাচ্ছেন তেমনি কে বেশি এগিয়ে সেটা বলাও অনেকটা কঠিন মনে করছেন ভোটাররা। সব মিলিয়ে ৪ প্রার্থীর মাঝে হাডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদ।তিনি হেলিকপ্টার প্রতিক নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরছেন। তিনি বিশ্বম্ভরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বটে। গোটা উপজেলায় তিনি একজন সজ্জন ও শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাকে ঘিরে ভোটারদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।ভোটাররা বলছেন, হারুন একজন ন্যায় বিচারক। তিনি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন সাধারন মানুষ তার কাছে সেবা পেয়েছে। তাকে আমরা আরও একবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই। হারুন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা হওয়ার কারণে তার পক্ষে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা যাচ্ছেনা। তবে অনেকেই পরোক্ষ ভাবে তার সমর্থনে কাজ করছেন। যদি বিএনপির লোকজন ভোটে যায় তাহলে সে ও চমক দেখাতে পারে এমন দাবী অনেকের।
ঘোড়া প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দিলীপ কুমার বর্মন।তিনি উপজেলা আওয়ালীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক। তার সাথে আওয়ালীগের তৃণমুলের বিশাল একটা অংশ মাঠে রয়েছে।জয়ের আশায় তিনি উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে চলছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এই নির্বাচনে পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন কিছু গড়ার প্রত্যাশা তার। ধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন মিয়া জানান দিলীপ বাবু একজন সাদামাটা মানুষ।তার পরিবার নিজস্ব অর্থায়নে এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্টা করেছেন। আমরা তাদের কারো উপর জুলুম করতে দেখিনি। বরং জনসেবার মাঝে তারা সুখ খুঁজে নেন। আশা করি তিনিই বিজয়ি হবেন। অন্য প্রার্থী জয়ী হলে বিশ্বম্ভরপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে।
এদিকে ধনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ালীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার আনারস প্রতিক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে তার ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া উপজেলা আওয়ালীগের অনেকেই তার পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করছেন। তাকে ঘিরে ভোটারদের অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন জয়ের আশা নিয়ে বিবাহসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। হাটবাজার, রাস্তাঘাটে ছুটে বেড়াচ্ছেন। পথসভায় জনগণের সঙ্গে কুশল বিনময় ও ভোট প্রার্থনা করেছেন। সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
সলুকাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন ও পলাশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ জানান, রফিকুল একজন ভদ্রলোক। তিনি কিছু দিতে পারুক আর না পারুক অন্তত সাধারন মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। সুখে-দুঃখে ছুটে আসেন। মানুষের সমস্যাগুলো তার কাছে নিজে গিয়ে বলতে পারে। কোনো দালালের দরকার হয় না। তাকে স্যারও বলতে হয় না। তাকেই এবার ভোট দিব মানুষ। আবার কেউ বলেন, অনেককেতো দেখলাম। এবার পরিবর্তন চাই আমরা।
রণজিৎ চৌধুরী রাজন দোয়াত-কলম প্রতিক নিয়ে হাওরের গ্রামে গ্রামে ভোট প্রার্থনা করছেন।তিনি ফতেহপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের অন্যতম নেতা. ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্যেই তার যাত্রা শুরু। বয়সে তরুণ হওয়ায় তরুনরা তার দিকে ঝুঁকছেন বেশি। এছাড়া উপজেলা হিন্দুদের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। বেশিরভাগ ভোট তার বাক্সে পড়বে বলে মনে করেন ভোটাররা। অবহেলিত ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি এলাকায় প্রভুত উন্নয়ন সাধন করেছেন। করোনা, বন্যায় তিনি মানুষের পাশে ছিলেন।রাজন শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে চমক দেখাতে পারেন এমন ধারনা ভোটারের। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এ জন্য এলাকার মানুষ তাদের সন্মান করেন।
অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে নীরব সুর। উপজেলার বিএনপি’র ভোটগুলো যদি ধরে রাখতে পারে তাহলে সহজে হারুন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট দিলিপ,রফিকুল,রাজনের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। মোহন বাচ্চু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেও তাকে নিয়ে ভোটারদের কোন আলোচনা সমালোচনা নেই। সবশেষে ভোটারদের ধারনা এ উপজেলায় চতুর্মুখী লড়াই হবে। তবে বিজয়ি হবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। দেখা যাক শেষ হাসি কে হাসে।
এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১লাখ ২৪ হাজার ১২৭ জন।এর মধ্যে পুরুষ ৬২হাজার ৯০৪ জন এবং নারী ৬১হাজার ২২২ জন।হিজরা ভোটার রয়েছে ১ জন।