নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার বারহাট্টায় ইমামের ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক তরুণী ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই তরুণী সন্তান জন্ম দেন।
বুধবার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নবজাতক ও তার মা দুজনই সুস্থ আছেন। দুপুরে তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন।
অভিযুক্ত হাফেজ নুর আহম্মদ (৫৭) বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের মৃত মগল মিয়ার ছেলে।
ধর্ষণের ঘটনায় ওই তরুণী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত ১১ সেপ্টেম্বর নুর আহম্মদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থেকে উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জামিন নেন নুর আহম্মদ। পরে নিম্ন আদালত থেকেও জামিন পান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাফেজ নুর আহম্মদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শানারপার এলাকায় বসবাস করেন। নিজ বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টার মল্লিকপুরে তার মা বসবাস করেন। মাকে দেখতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসেন তিনি। এ সময় নদী খননের বালু তুলে বিক্রি করেন। এ সময় বেশ কিছুদিন এলাকায় থাকেন। বিভিন্ন কাজের বাহানায় পাশের বাড়ির এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ কথা কাউকে না বলতে হুমকি দেন।
এছাড়া ওই তরুণীকে নানা লোভ-লালসাও দেখান নুর আহম্মদ। একপর্যায়ে ওই তরুণী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি নুর আহম্মদকে জানালে প্রতিবেশী কয়েকজনকে দিয়ে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দেন। এমনকি ওই বাচ্চা তার নয় বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার লালন বখত মজুমদার বলেন, নুর আহম্মদ ইমামতি করলেও তার নারী কেলেঙ্কারির অনেক ঘটনা আছে। বর্তমানে বিদেশে লোক পাঠায়, আদম ব্যবসাও করে। এই প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিয়ে করার কথা বললেও সে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার কিছু লোকজনকে টাকাপয়সা দিয়ে তার পক্ষে নিয়েছে। তারা ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ ঘটনায় তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ভুক্তভোগীর মা জানান, আমি খুবই অসহায় একজন নারী। আমার ৭ সন্তানের মধ্যে ৫ জনই প্রতিবন্ধী। স্বামী মারা যাওয়ার পর এদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আশা করি বিচার পাব। তবে নুর আহম্মদ টাকা দিয়ে গ্রামের কয়েকজনকে দিয়ে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার লোকজন উল্টো আমিসহ আমার প্রতিবন্ধী ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়েছে।
বারহাট্টা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাচ্চা যেহেতু প্রসব হয়েছে। এখন আদালতের অনুমতি নিয়ে আসামি, ভিকটিম ও নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।