July 9, 2025, 3:51 pm
ব্রেকিং নিউজ
শুধু হাসিনার নয়, আওয়ামী লীগেরও বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ কারাগারে নকশিকাঁথা শিখে স্বাবলম্বী নারী কয়েদিরা এসএসসির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা কাকরাইলে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের উপর জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শিবির নয়, লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ছাত্রদলের নাছির ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার-বিচারের সুরাহা হতে হবে: নাহিদ গত ১৫ বছরে কেমন সাংবাদিকতা হয়েছে, পুনর্মূল্যায়নে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছে সরকার:প্রেস সচিব বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’, সাধারণ ছুটি ঘোষণা সেই সাবেক সহকারী কমিশনার ঊর্মি চাকরিচ্যুত ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস বিলে কর কমল এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউনসহ’ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ব্যাগে পাওয়া গেল গুলির ম্যাগজিন ইমাম-খতিবদের সুখবর দিলেন ধর্ম উপদেষ্টা

ইভটিজিং রোধে: নারীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Friday, June 13, 2025
  • 30 দেখা হয়েছে

মমিনুল ইসলাম মোল্লা:
আজ (১৩ জুন) ‘নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে আছে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারীর স্বাভাবিক চলাচল, জীবনযাপন অবাধ, সমুন্নত করা ও তাদের অধিকার এবং সন্মান বজায় রাখা। আমাদের দেশে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের জন্য সচেষ্ট হয়ে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রণয়ন করা আইনটি একটি আলাদা আইন হিসেবে দেখানো হলেও পরবর্তীকালে সেটা নারী নির্যাতন আইনের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।প্রথমবারের মতো ১৩ জুনকে ঘিরে ব্যাপকভাবে ‘নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয় ২০১০ সালে।
আধুনিক সমাজে ‘ইভটিজিং’ শব্দটি ‘যৌন হয়রানি’ (Sexual Harassment) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‘যৌন হয়রানি’ হচ্ছে সেই ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ, যা মানুষের যৌনতাকে উদ্দেশ্য করে মানসিক ও শারীরিকভাবে করা হয়।
যৌন হয়রানি বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে নিুরূপ-ক. অনাকাক্সিক্ষত যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি অথবা ইঙ্গিতে) যেমন- শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরনের প্রচেষ্টা।খ. প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কারও সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা।গ. যৌন হয়রানি বা নিপীড়নমূলক কথা বলা।ঘ. যৌন সুযোগ লাভের জন্য অবৈধ আবেদন।ঙ. পর্নোগ্রাফি দেখানো।চ. যৌন আবেদনমূলক ভঙ্গি।

হঠাৎ করেই ইভটিজিংয়ের মত ঘটনার জন্ম হয়নি। দীর্ঘদিনের সামাজিক অবক্ষয় ও পারিবারিক ভাঙ্গনের বিষময় ফলেই তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পিতা-মাতা উভয়েই কর্মজীবি হওয়ায় সন্তানরা তাদের সঙ্গ পাচ্ছে না। ফলে তারা বিভিন্ন খারাপ পরিবেশের সাথে সখ্য গড়ে তোলে। বর্তমান সময়ে তরুণ-তরুণীদের কাছে টিভি সিরিয়াল বা অন্যান্য অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশী-বিদেশী টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন অশ্লীল গান-বাদ্য, নৃত্য-নাচ, নর-নারীর নগ্ন-অর্ধনগ্ন ছবি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি পরিবেশন করছে। স্যাটেলাইট বা অন্যান্য টিভি চ্যানেলগুলোতে যেসব দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছে তা কোন লজ্জাশীল মানুষ পরিবার নিয়ে দেখতে পারে না। বাংলাদেশসহ অধুনা বিশ্বের সর্বত্রই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও যৌন চর্চার বিষয়বস্ত্ত সম্বলিত ছায়াছবি, নাটক প্রভৃতি প্রদর্শিত হচ্ছে। যা দেখে এ দেশের তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে।ইভটিজিংসহ অন্য যেসব ক্ষেত্রে তরুণীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে তার পেছনে শুধু বখাটে বা অন্য কারণগুলোই সর্বাংশে দায়ী এমন নয়। সামাজিক অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি চর্চার সাথে সাথে তরুণীদের বেপরোয়া চলাফেরা এর অন্যতম কারণ। কুরআন মাজীদে নারীদের ভদ্র ও মার্জিতভাবে চলাফেরা করতে তাকীদ দেওয়ার পাশাপাশি অজ্ঞযুগের মত সাজসজ্জা করে নির্লজ্জের মত রাস্তায় চলাফেরা করতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে (আহযাব ৩৩/৩৩)। অথচ আমাদের দেশের মেয়েরা আধুনিকতা ও প্রগতির দোহাই পেড়ে কুরআনের হুকুমের অবমাননা করে বেহায়ার মত চলাফেরা করছে। আপত্তিকর পোষাক পরে বিশেষ করে পাতলা কাপড়, ওড়না ছাড়া পোষাক, হাত কাটা কামিজ, টাইটফিট পোষাক ইত্যাদি পরে বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী মেখে সাজসজ্জা করে রাস্তাঘাটে, বাইরে, হাটে-বাজারে, মার্কেটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুবকদের মাঝে নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে যুবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
নারী উত্ত্যক্তের অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল পর্দার বিধান পালন না করা। পর্দা নারীর ইয্যত, সম্মান ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি। নারী যখন আল্লাহ প্রদত্ত পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করে, তখনই সে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, অঙ্গহানী, এসিড নিক্ষেপ, উত্ত্যক্ত করা ইত্যাদির প্রধানতম কারণ নারী ও পুরুষ কর্তৃক পর্দার বিধান লঙ্ঘন। নারীরা যতই খোলামেলাভাবে চলাফেরা বেশী করবে, ততই তাদের সম্মানহানি ঘটবে। ভিসিআর, টিভি, স্যাটেলাইট, ভিডিও, সিডি, বিজ্ঞাপনে নারী-পুরুষের, যুবক-যুবতীদের একত্রে নাচ-গানের অনুষ্ঠান, অশালীন পোষাক পরিহিত চিত্র বা ছায়াছবি এবং যৌন উত্তেজনাধর্মী চলচ্চিত্র প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যৌন উত্তেজক গান, কবিতা, সাহিত্য, নভেল, নাটক বন্ধ করতে হবে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে ‘‘যে ব্যক্তি, অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করিয়া- (ক) কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল কার্য করে অথবা (খ) কোনো প্রকাশ্য স্থানে বা সন্নিকটে কোনো অশ্লীল গান গাঁথা, সঙ্গীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনায় কারাদণ্ডে যাহার মেয়াদ ৩ মাস পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে”। এই আইন দ্বারা ছোট ছোট ঘটনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা সম্ভব। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৫০৯ ধারা অনুযায়ী, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার অভিপ্রায়ে এই উদ্দেশ্যে কোনো মন্তব্য করে, কোনো শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তুপ্রদর্শন করে যে উক্ত নারী অনুরূপ মন্তব্য বা শব্দ শুনতে পায় অথবা অনুরূপ অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু দেখতে পায়, কিংবা উক্ত নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশ করে, সেই ব্যক্তি ১ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন’’।
গণপরিবহন, রাস্তা, অফিস, স্কুল-কলেজ, এমনকি নিজের বাসা– বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে নারীরা হয়রানি বা ইভটিজিংয়ের শিকার হন না। অনেকেই চুপ করে সহ্য করেন, অনেকে প্রতিবাদ করেন। ঠিকঠাক প্রয়োগ না হলেও বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে এসব হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রত্যেকেই চান এই অপরাধ আইনের আওতায় আসুক ও অপরাধীর বিচার হোক। কিন্তু দুখঃজনক হলেও এটাই সত্য যে লাখ লাখ খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতির মতো মামলার ভিড়ে এই উত্ত্যক্তকারীদের বিচার হওয়া একটি দুর্লভ ঘটনা। তার ওপর আছে রাজনৈতিক পরিচয় আর ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। তার মানে কি বিচারের ভার ছিনিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগী নিজেও একজন অপরাধী হয়ে উঠবে? অথবা ’ক্ষমতাশালী’ কারও সাহায্য নিয়ে প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? এভাবে কি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব? ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা। তিনি বলেন, ‘ঘরের শিক্ষায় আমরা আসলে ছেলে শিশুটিকে যতটা না বোনকে সম্মান করা শেখাই, তার চেয়ে বেশি শেখাই বোনের ওপর নজরদারি করা। পরিবারে, স্কুলে মানবিক শিক্ষা দিতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।’
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, কলাম লেখক, সাংবাদিকও মানবাধিকারকর্মী, কুমিল্লা ।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102