গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি! এবার কাঁচা, আধপাকা ধানের ক্ষেত কেটে খড় হিসেবে বিক্রির ধুম পড়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে জমে উঠেছে ‘খড়ের হাট’। তবে ব্রিধান আর বিনাধান চাষি কৃষকরা পেলেন দ্বিগুণ লাভ। গরুর খাদ্য সংকটে আছেন কৃষক ও খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, গৌরীপুর পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে কৃষকপর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গরু ও প্রায় ৬৭ হাজার ছাগল রয়েছে। উপজেলার গরু মোটাতাজাকরণ খামার ১৫০টি ও দুগ্ধ খামার ৩০টি। হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান নেওয়ার কারণে খড়ের প্রচণ্ড ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া বাজারে দেখা হয় কৃষক ফয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি উপজেলা চুড়ালী গ্রামের সৈয়দ আলীর পুত্র। তিনি জানান, তার ৩০ শতাংশ জমিতে মাত্র ৮ মণ ধান হয়েছে। তবে এ জমির খড় বিক্রি করেছেন প্রায় ৯ হাজার টাকা। ধানের চেয়ে খড়ের মূল্য বেশি।
রামগোপালপুর ইউনিয়নের বেরাটি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, বাজারে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে অধিকাংশ কৃষক গোখাদ্য খড় সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই এবার গোখাদ্যের জন্য কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া বাজারে কথা হয় বড়ইতলার মো. উমেদ আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ৩-৪ কেজি ওজনের খড়ের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে।
রুকনাকান্দা গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল গণি জানান, ১০ শতাংশ জমিতে ধান হবে ৩ মণ। কাটতে লাগে ৭শ টাকা। ধান বিক্রি করে পাব ২ হাজার ৪শ টাকা। এখন ক্ষেতের খড় বিক্রি করে দিয়েছি ৩ হাজার ৪শ টাকা। ধানের চেয়ে খড়ের মূল্য বেশি পেয়েছি।
এদিকে মাওনা ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন জানান, গোখাদ্যের আকাল দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়েই মানুষ বেশি দাম দিয়ে খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
অপরদিকে অচিন্তপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে রাতের আঁধারে কৃষকের আধপাকা ধান কেটে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অচিন্তপুরের কৃষক রুমেল মিয়া জানান, তার ৩০ শতাংশ জমির প্রায় অর্ধেক ধানই কেটে নিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, এ বছর আমন মৌসুমে গৌরীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৪০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ২০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড প্রজাতির ধান ১০০ হেক্টর, উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৩৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে।
তিনি জানান, উপজেলায় ব্রিধান ৫৬ ও ৬২, বিনা-৭ ও ১৭ জাতের ধান যেসব কৃষক চাষ করেছেন তারা এবার দ্বিগুণ লাভ করেছেন। ধানও পেয়েছেন আর উচ্চমূল্যে খড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।