আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রোববার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ গলফ ক্লাব থেকে রায়ান ওয়েসলি রাউথকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প সেদিন সেখানে গলফ খেলতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যাচেষ্টার শিকার হলেন ট্রাম্প।
২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি বই ‘ইউক্রেনস আনউইনেবল ওয়ার’-এ ট্রাম্পকে হত্যা করতে ইরানকে আহ্বান জানিয়েছিলেন রাউথ। ট্রাম্পের এ হত্যাচেষ্টাকারি বইতে লিখেছিলেন- তিনি একসময় ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। আমরা সেদিন এক মস্তিষ্কহীন শিশুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছি।
বইতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের মদদে ক্যাপিটালে দাঙ্গা ও ট্রাম্পের ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার সমালোচনা করেছেন রাউথ। সেখানে তিনি এসব ‘ভুল সিদ্ধান্ত’-এর জন্য ট্রাম্পকে দোষী করেন।
রাউথ তার বইয়ে লিখেছেন, আমি ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান নই। আমি কোনো শ্রেণিতে বাধা পড়তে চাই না।
তিনি আরও লেখেন, বিশ্বটি নারীদের দ্বারা পরিচালিত হলে আরো ভালো হতো কারণ বিশ্বের সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো পুরুষদের নিরাপত্তাহীনতা ও শিশুসুলভ বুদ্ধিমত্তা ও আচরণ।
জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ার একটি সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর এক্স-এ পোস্ট করেছিলেন রাউথ। সেখানে তিনি আহতদের দেখতে ও নিহত দমকলকর্মীর শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকার জন্য জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি সেদিন এক্স-এর পোস্টে লিখেছিলেন, ট্রাম্প কখনো তাদের জন্য কিছু করবে না।
এর আগে এপ্রিলে বাইডেনকে সমর্থন করে তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ লেখেন- গণতন্ত্র ব্যালটের কাছাকাছি এবং আমরা হারতে পারি না।
রায়ান ওয়েসলি রাউথ নিজেকে অনলাইনে হাওয়াইতে গৃহহীনদের জন্য আবাসন ও ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যোদ্ধা সংগ্রহকারী হিসেবে দাবি করেন।
বিভিন্ন পাবলিক রেকর্ড, সাক্ষাৎকার ও ভিডিও থেকে রাউথকে একজন ক্ষুব্ধ বাম থেকে ডানপন্থি মতাবলম্বী হওয়া এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে দেখা গেছে। তার অনেক অতীত অপরাধও রয়েছে। তার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি বিভিন্ন সময়কালে বার্নি স্যান্ডার্স, তুলসি গ্যাবার্ড, নিক্কি হ্যালি এবং ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন।
রাউথের ভোটার রেকর্ডে দেখা যায়, তিনি ২০১২ সালে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে একটি নিরপেক্ষ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। ফেডারেল ক্যাম্পেইন অর্থায়ন রেকর্ড অনুযায়ী, রাউথ ২০১৯ সাল থেকে অ্যাক্টব্লুয়ের মাধ্যমে ১৯টি ছোট অনুদানে মোট ১৪০ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। এ অনুদান মূলত ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের দেওয়া হয়।
২০২০ সালের জুনে জর্জ ফ্লয়েড নামে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় রাউথ তৎকালীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে লিখেছিলেন, ট্রাম্প যদি পুলিশের এ দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী আদেশ জারি করেন তাহলে পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, তার পোস্টগুলোর বেশিরভাগই ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন।
অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে রাউথ কিয়েভের ইন্ডিপেনডেন্স স্কয়ারে ছোট একটি বিক্ষোভে অংশ নেন। তার দুই মাস পরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির ওপর আক্রমণ চালান।
ওই সময় রাউথের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমরা আর ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে দুর্নীতি ও মন্দা সহ্য করতে পারি না। আমাদের বাচ্চাদের জন্য রাশিয়াকে শেষ করুন।’
শাহুরি এপিকে বলেন, রাউথ মাঝে মাঝে ইউক্রেনের ইন্টারন্যাশনাল লিজিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তিনি সে সময় তাদের কাছে ‘অবাস্তব ধারণা’ তুলে ধরতেন যার সবই ছিল ‘বিভ্রান্তিকর’।
২০২৩ সালে এ বিষয়ে একটি সংবাদ ওয়েবসাইট সেমাফরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তারা সবাইকে রাশিয়ান গুপ্তচর বলে সন্দেহ করছে।
এ বছরের শুরুতে রাউথ গায়ক ব্রুনো মার্স ও ডেভ ম্যাথিউসকে টুইট করে কিয়েভের জন্য ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’ গানের মতো সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি কখন লেখেন, আমাদের ইউক্রেনের জন্য একটি আবেগপূর্ণ গান প্রয়োজন, কারণ সমর্থন থেমে যাচ্ছে। আমার কাছে গানের কথা এবং সুর রয়েছে।
রাউথ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় নর্থ ক্যারোলিনার গ্রিনসবারোতে কাটিয়েছিলেন। এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে তার একাধিকবার সংঘাত হয়।
আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০২ সালে তিনি বিস্ফোরক, ডেটোনেশন কর্ড এবং বিস্ফোরক টুপি রাখার দায়ে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।