April 30, 2024, 12:59 am
ব্রেকিং নিউজ

‘ডিপফেক’-এ বিব্রত বলিউড নায়িকারা

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Saturday, March 30, 2024
  • 36 দেখা হয়েছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনারও। তেমনি একটি প্রযুক্তি ‘ডিপফেক’। এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তারকাদের ভুয়া ভিডিও বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় অনলাইনে। ভারতের বেশ কয়েকজন তারকা এই ডিপফেকের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে নারী তারকারা এ বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ডিপফেক নিয়ে বিব্রত বলিউড তারকাদের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

রাশমিকা মান্দানা

রাশমিকা মান্দানা বলিউডে প্রথম ডিপফেকের শিকার। গত বছরের নভেম্বরে এক নারীর মুখের মধ্যে রাশমিকার মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে সবাই মেয়েটিকে রাশমিকাই মনে করে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। পরে জানা যায়, সেটা ডিপফেক। দেখা যাচ্ছিল লিফটের মধ্যে ঢুকছেন রাশমিকা। পরনে তার কালো রঙের পোশাক। পোশাকটির গলা গভীরভাবে কাটা। এতটাই কাটা যে, ওই পোশাকের মধ্যে দিয়ে উঁকি মারছে অভিনেত্রীর বুক। আর মুহূর্তেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে থাকেন তিনি। ‘অ্যানিম্যাল’ সিনেমার প্রচার করতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ওই ভিডিওটি দেখি, তখন আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভাবিওনি যে, আমি কারও কোনো রকম সাহায্য পাব। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়ান বিগ বি অমিতাভ বচ্চন।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না। নিজে এগিয়ে এসে আওয়াজ তুললে এমন অনেকেই আছেন, যারা আপনার পাশে দাঁড়াবেন।’

 

ক্যাটরিনা কাইফ

গত বছর ক্যাটরিনার ‘টাইগার থ্রি’-এর ট্রেলারে একটি দৃশ্যে ক্যাটরিনাকে দেখা গেছে, তোয়ালে জড়িয়ে অন্য এক অভিনেত্রীর সঙ্গে লড়াই করতে। সেই দৃশ্যেই ক্যাটের ছবির ওপর চলে কারসাজি। আসল ছবিতে তোয়ালে দিয়ে ঢাকা নায়িকার শরীর। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ডিপফেক ছবিতে প্রায় অনাবৃত ক্যাটরিনা। সেই দৃশ্য এডিট করে ক্যাটরিনাকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ছবিকে চিত্তাকর্ষক করে তুলতে ক্যাটের চেহারাতেও একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মতো। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর বিব্রতবোধ করেন ক্যাট এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।

 

কাজল

গত বছরই ডিপফেকের শিকার হন আরেক বলিউড অভিনেত্রী কাজল। ভাইরাল সেই ভিডিওক্লিপে দেখা যায়, ক্যামেরার সামনে পোশাক বদলাচ্ছেন কাজল। মূলত এটি একটি ডিজিটালি এডিট করা ভিডিও। যেখানে অন্য কোনো নারীর মুখে কাজলের মুখচ্ছবি এডিট করে বসানো হয়েছে। কিন্তু নেটিজেনদের অনেকেই ভিডিওটিকে সত্য বলে ভেবে শেয়ার করেছিলেন। এর ঝড় বয়ে যায় কাজলের পরিবারেও। শেষ পর্যন্ত যখন জানা গেল, এটি প্রযুক্তির কারসাজি। তখন কাজল ও তার স্বামী অভিনেতা অজয় দেবগান প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে এর প্রতিকারের দাবি জানান।

 

আলিয়া ভাট

ডিপফেক ভিডিওতে আপত্তিকর পোশাকে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা গেছে অভিনেত্রী আলিয়াকেও। তবে ভিডিও থেকেই স্পষ্ট, ওই নারী মোটেও আলিয়া নন। এরপরও ছড়িয়ে পড়ে ওই আপত্তিকর ভিডিও। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি অভিনেত্রী।

তার স্বামী রণবীর কাপুরও এ বিষয়ে কথা বলেননি। বলা যায়, তারা নীরব প্রতিবাদ জানান এর বিরুদ্ধে।

 

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার একটি অডিও গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, সেটা অভিনেত্রীর নয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, যে অডিও ক্লিপটিকে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি প্রিয়াঙ্কার অন্য এক ভিডিওতে ছিল। ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই অডিওর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রিয়াঙ্কার কথা। ওই অডিওতে নিজের বার্ষিক আয়ের বর্ণনা দিয়েছেন অভিনেত্রী, যা সম্পূর্ণ বানোয়াট। প্রথমে এতে চরম বিব্রত হলেও পরে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানান তিনি।

 

ডিপফেক কী?

ডিপফেক শব্দটি এসেছে ‘ডিপ লার্নিং’ অর্থাৎ গভীরভাবে শিক্ষা নেওয়া এবং অন্যদিকে ‘ফেক’ অর্থাৎ নকল বা ভুয়া এ দুই শব্দের সংমিশ্রণ থেকে। ছবি এবং ভিডিও সংশ্লেষণে প্রশিক্ষিত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত সফটওয়্যার এই ভিডিওগুলো তৈরি করে থাকে। ডিপফেক পর্নো হচ্ছে এমন এক ধরনের পর্নোগ্রাফিক ভিডিও, যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন নারীর দেহের সঙ্গে আরেকজন নারীর মুখ যোগ করে দেওয়া হয়। এর শিকার হয়েছেন যে নারীরা তাদের নিয়ে ‘মাই ব্লন্ড জিএফ’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন রোজি মরিস।

ছবিটিতে এই নারীরা বর্ণনা করেছেন, এই ডিপফেক পর্নো কীভাবে তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। ডিপফেক বহু আগে থেকেই আছে এবং তারকাদের লক্ষ্য করেই তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন সময় নানা অশ্লীল ভিডিও। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে হলিউডে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নাটালি পোর্টম্যান বা এমা ওয়াটসনের মতো বড় তারকারাও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। ডিপফেকের অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইনফ্লুয়েন্সার, মডেল, ক্রীড়াবিদসহ অনেকেই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিপফেক ভিডিওর ৯৬ শতাংশ পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত।

২০১৭ সালে প্রথম ডিপফেক প্রযুক্তি প্রচারণা পায়। এই প্রযুক্তি যে কেবল নকল ভিডিও তৈরি করতে পারে, তা নয়। এটি মানুষের ভয়েস মডেলও তৈরি করতে পারে।

 

কেন ডিপফেক

এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করে। তার একটি হলো- বলিউড তারকাদের নিয়ে যে কোনো কিছু খুবই আকর্ষণীয় ক্লিকে পরিণত হয়, ফলে বিজ্ঞাপন থেকে অনেক আয় করা যায়। একই সঙ্গে যারা এই ভিডিওগুলো দেখছে, তাদের অজান্তেই তথ্য বিক্রি করার একটা সুযোগ তৈরি হয়।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102