April 19, 2024, 6:10 pm
ব্রেকিং নিউজ

পদ্মা নদী বালু খেকোদের দখলে

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট টাইম Thursday, December 1, 2022
  • 118 দেখা হয়েছে

(রাজু আহমেদ) স্টাফ রিপোর্টার রাজবাড়ী :

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। নদী থেকে বালু তোলার জন্য সরকারের অনুমতির নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালী ওই মহল কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকাসহ আশপাশের ফসলি জমি। গত তিন বছরে সাত হাজার একশত পাঁচটি পরিবার গৃহহীন হয়েছে এবং এই উপজেলার এক পঞ্চমাংশে নদীগর্ভে বিলীন হলেও বালু খেকোরা থেমে নেই। স্বনামে বেনামে চলছে বালু উত্তোলন।

এছাড়া দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটে সরকার প্রায় সারে তেরশ কোটি টাকার মহাপ্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন সেটাও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থানে বালু খেকুদের কারণে। এছাড়া নদী ভাঙনের কারণে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার জিওব্যাগ ফেলছে ঘাটকে রক্ষা করার জন্য। জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন বিভাগের তথ্য মতে, পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে ২০১৭ সালে ১৯১৫ টি, ২০১৮ সালে ২০৭০ টি এবং ২০১৯ সালে ৩১২০ টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই অঞ্চলের অনেক গ্রাম।

সরজমিনে দেখা যায় দৌলতদিয়া সাত নম্বর ফেরিঘাটের পাশেই দুইটি বেকু দিয়ে মাটি তুলে ট্রাকে দিচ্ছে এবং সারি সারি ট্রাক দাড় করানো আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচশ ট্রাক বালু এখান থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এই অঞ্চলের রাস্তা ঘাট বাড়ি ঘর ধুলাবালিতে পরিপূর্ণ এবং রাস্তাঘাটের চিহ্ন নেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
ফেরিঘাট সহ পুরো এলাকাটি রয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় হয়তো সামনের বর্ষায় বিলীন হয়ে যাবে ঘাটসহ গ্রামটি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান,পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এবং বেকুদিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিকারে বালু উত্তোলন করে চলেছে। এতে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি জমি ও বসতভিটাও পড়েছে হুমকির মুখে। পাশপাশি সারাদিন ট্রাকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের মানুষেরা। অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের সামনে অবৈধ বালু উত্তোলন হলেও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকরি কোন ব্যাবস্থা।

শুধু তাই নয়, সড়ক দিয়ে বে-পরোয়া ভাবে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তাদের চলাচলের রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নষ্ট হওয়ায় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। বালুদস্যুরা অসাধু কিছু লোকের সাথে আতাঁত করে নির্বিচারে বালু ব্যবসা করে আসছে।

বালু উত্তোলনকারীদের সাথে কথা বললে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে বালু উত্তোলন করছি। তাছাড়া সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন এব্যাপারে জানে।বালু উত্তোলনের বিষয়টি সতত্য স্বীকার করে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রহমান মন্ডল জানান, সরকারি রাস্তার কাজে এই বালু ব্যাবহার করা হচ্ছে। রাস্তাটি আমার ইউনিয়নের জন্য দরকার।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। ঠিকাদার রাস্তার নির্মানের প্রয়োজনে বালু দরকার হলে কিনবে সেজন্য তার অর্থ বরাদ্দ রয়েছে।

এব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন। বলেন নদী বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। এব্যাপারে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানাকে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে।

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...
themesba-lates1749691102