অনলাইন ডেস্ক:
আতঙ্ক ছড়িয়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা রহস্যজনক এবং এটি সেন্টমার্টিন ঘিরে গভীর যড়যন্ত্রের অংশ কিনা এনিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন জিজ্ঞাসা।
গত সপ্তাহ দশদিন ধরেটেকনাফ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার দিক থেকে তিনবার গুলি করা হয়েছে এই খুড়া অজুহাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপে এবং দ্বীপের বাইরে। আর এই
রহস্যজনক আতঙ্ক ছড়িয়ে বন্ধ রয়েছে সেন্টমার্টিন এর সাথে একমাত্র যোগাযোগ পথে নৌযোগাযোগ। এর মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে প্রবাল দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দার। তারা প্রতিটি মুহূর্ত পার করছেন আতঙ্কে।
স্থানীয় প্রশাসন সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাগরিকদের নিরাপত্তায় কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। এমকি তারা বুঝতে পারছে না গুলি মিয়ানমারের জান্তা করেছে, নাকি বিদ্রোহীরা করেছে? নাকি অন্য কোন তৃতীয়পক্ষ উদ্দেশ্য মুলকভাবে গুলি ছুড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ জনশূন্য করার জন্য রহস্যজনকভাবে কাজ করছে! ফলে দ্বীপবাসীর নিরাপত্ত্বায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে গত বুধবার মর্টারশেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে আরেক দফা ভীতি ছড়িয়ে পড়ে সেন্টমার্টিনে। একই সময় আকাশে যুদ্ধবিমানের টহল ও নাফ নদীতে যুদ্ধ জাহাজের টহলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দ্বীপবাসী।
তবে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করে বলেছে, তারা গুলি করেনি। কিন্তু গুলি তো হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, নৌযান বন্ধের কারণে সেন্টমার্টিনে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সেন্টমার্টিনে যাতায়াতে বর্তমান রুটের বিকল্প খোঁজ করছি। পরে রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেছেন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজ যাবে খাদ্যপণ্য নিয়ে।
আর রোগীসহ যেকোনো জরুরি যাতায়াত হবে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর এলাকা হয়ে। বিষয়টি সমন্বয় করবেন টেকনাফের ইউএনও। নৌপথে নিরাপত্তা দেবে কোস্টগার্ড।
আজ দুপুর ১২ নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বার আউলিয়া নামে একটি জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য ও কক্সবাজার-টেকনাফে আটকে পড়া দ্বীপের নাগরিকদের নিয়ে।
দ্বীপের বাসিন্দা মুহাম্মদ রফিক সহ অনেকেই জানান, সবই ঠিক। তবে তাদের মতে বিষয়টি পুরাই রহস্যজনক।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, পূর্বদিকে মিয়ানমারে রাখাইনের মংডুতে হাসসুরাতা ও মেরুল্ল্যা গ্রাম থেকে বুধবার দিনভর ব্যাপক মর্টারশেলের শব্দ পেয়েছেন তারা। এতে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এ সময় আকাশে যুদ্ধবিমান এবং সাগরের পানিসীমানায় দেখা যায় মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ। দ্বীপবাসী খুবই আতঙ্কে রয়েছেন। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা।
এদিকে সচেতন মহলের মতে- মিয়ানমার দিক থেকে কে বা কারা একটা দুইটা গুলি ছুড়লো এই খোড়া অজুহাতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অংশ দশ দিন নয় এক মুহুর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন থাকবে তা কোন মতেই মেনেনেয়া যায়না। তাদের মতে যুদ্ধ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমাদের কোন বিষয় নয়। এর কোন প্রভাব আমাদের কোন অংশে দেখাদিলে তার জন্য রয়েছে আমাদের নৌ, বিমান ও স্থল নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের মতে গত দশ দিনে সেন্টমার্টিনের নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্ত্বা সহ খাদ্য নিরাপত্তা দিতে নাপারার দায় স্থানীয় প্রশাসন কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
সচেতন মহলের মতে এই খোড়া অজুহাতে দ্বীপবাসীর মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সেন্টমার্টিন জনশূন্য করে সেখানে অন্য কাউকে ডেকে আনার ষড়যন্ত হচ্ছে কি না তাও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। বঙ্গোপসাগর দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন দশ দিন পর খাদ্যপণ্য পাঠাতে পারলে এই দশ দিন পর্যন্ত দ্বীপের দশ হাজার নাগরিককে আতঙ্কের মধ্যে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রাখার কোন কারণ খোঁজে পাচ্ছেন না সচেতন মহল।
সূত্র-ইনকিলাব