লতিফুর রহমান রাজু.সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ. দিরাই. ছাতক. তাহিরপুর. সুনামগঞ্জ সদর. বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গতরাতে ঘূর্নিঝর ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে মানুষ, ঘরবাড়ি ও যানবাহন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরন পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করে বিবরন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
গতকাল রবিবার রাত আনুমানিক ১০ টার পর প্রচন্ড ঘূর্নিঝর ও শিলাবৃষ্টির তান্ডব শুরু হয়। এতে সুনামগঞ্জ শহরের কালী বাড়ি সড়কে একটি যাত্রী বাহী সিএনজির উপর একটি গাছ পড়ে সিএনজির চালক সহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চালক রুয়েল ও যাত্রী সাদ্দাম কে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর পর সাদ্দামের অবস্হা গুরুতর হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও প্রচুর কাচা পাকা ঘরবাড়ি. গাছপালা. ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে আগাম জাতের ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান ক্ষয়ক্ষতি হয়নি আমরা আমাদের লোকজন কে বিভিন্ন জায়গাতে খোঁজ নিতে পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত ও সহায়তা প্রদানের জন্য ইউএনও দের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্হানে গতরাত থেকেই বিদ্যুতে নেই। সুনামগঞ্জ বিদ্যুতে বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু নুইমান জানান এখনও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি.কারণ প্রচুর তার ও খুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলমান শেষ করেই যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুতে সরবরাহ হবে। সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব জুয়েল মিয়া জানান প্রচুর যানবাহনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর মধ্যে প্রাইভেট গাড়ি ও রয়েছে। সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন সহ অন্যান্য এলাকার। শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী ইয়াকুব শাহরিয়ার জানান
কান্দিগাঁও ও হাজিপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে দেখেন, কারো ঘরের চাল নেই, কারো আবার ঘরই নেই। কারো ঘরের চাল ভয়ঙ্করভাবে আটকে আছে বৈদ্যুতিক খুঁটির আগায়। শত শত ঘরের টিন রাস্তা ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দোকানপাটের মালামালের খুঁজ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের একাধিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে রাস্তায়। গাছের বড় বড় ডালও ভেঙে পড়েছে। বসত ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে। আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ। কারো হাত কাটা, কারো মাথা ফাটা, কারো পা কাটা। সকলেই এর মধ্যেই মধ্য রাতে স্থানীয় ফার্মেসী ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে আটকা পড়ে অসংখ্য দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুত সরবরাহ। শুধু পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নই নয়, উপজেলার সকল ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে একই দৃশ্যের খবর পাওয়া গেছে। রাতেই লোকজন গাছ কেটে সড়কের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।
শান্তিগঞ্জউপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই সেহরি খাওয়ার মতো অবস্থা ছিলনা। আর ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় হতদরিদ্রদের সংখ্যা খুব বেশি। তাদের মাথাগুঁজার ঠাঁই নষ্ট হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে এসব মানুষকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করতে হবে। প্রবাসী ও মানবিক মানুষরা তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। না হলে এসব মানুষ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
রায়পুর পুরানবাড়ির হোসেন মিয়া বলেন, আমার সব শেষ। একমাত্র আশ্রয়স্থল ঘরটি পড়ে গেছে। আমার সব শেষ। আমার পাশের আরো দুটি ঘরও মাটির সাথে মিশে গেছে। একই গ্রামের সত্তোরোর্ধ মালিকুন বেগম। তার ঘরের চালের টিন পড়ে হাত কেটে ৭টি সেলাই লেগেছে।
পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী আমজদ আলী, ব্রয়লার মোরগের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও ইফতারির দোকানদার লিটন মিয়া বলেন, আমাদের জীবনেও এমন ঘুর্ণিঝড় দেখিনি। সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। কিচ্ছু বলার নেই।
সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে প্রচুর যানবাহন আটকা পড়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শহরের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম ও ইমরাস হোসেন। তারা বলেন, আমরা সিলেট থেকে পাগলায় আটকা পড়েছিলাম দীর্ঘ সময় পর ফিরে আসি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমি তখন পাগলা বাজারে ছিলাম। একটি দোকানের চালের টিন উপড়ে এসে আমার হাতে পড়েছে। সামান্য আহত হয়েছি। তবু আমি ও ইউএনও সাহেব মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্লিয়ার করা হয়েছে। পাগলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রেখেছি। পাগলা বাজারের মিজান ফার্মেসীতে রুগীদের সেবা দেওয়া হয় এখানে ডাক্তান আনা হয়েছে উপজেলা থেকে। অন্যান্য বিষয়ে পরে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে কাজ করবো। জেলা পরিষদ, প্রশাসনকে জানাবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, ঝড় থামার সাথে সাথেই আমি গভীর রাত পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাথে ছিলাম রাস্তায় পড়ে থাকা গাছপালা সরিয়ে দিয়েছি হাসপাতালগুলো খোলা রেখেছি। ডিসি স্যারকে ও জানিয়েছি। উপর মহলে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এম এ মান্নান ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও সালমা পারভীন জানান তার উপজেলার উপর দিয়ে ও প্রচন্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টির দখল গেছে. সরেজমিন ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করার কাজ চলছে। দিরাই উপজেলার মোশাহিদ আহমেদ জানান দিরাই উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।