লতিফুর রহমান রাজু(স্টাফ রিপোর্টার)সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বণিক থানায় যোগদান করার পর থেকেই মাদক ও মাদক সেবীদের নির্মূল করতে তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাই শ্রেষ্ঠ ওসি পুরস্কার পেয়ে টীম বিশ্বম্ভরপুরের মধুমাস উদযাপন করলেন শ্যামল বণিক।এর আগে পেয়ে ছিলেন সিলেট রেঞ্জ এর সেরা পুরস্কার।রোববার (৯জুন) সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সে মাসিক কল্যান সভায় অধিক সংখ্যাক মামলা নিষ্পত্তি ও গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় পুলিশ সুপার এহ্সান শাহ, পিপিএম-সেবা (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নাতি প্রাপ্ত) সুনামগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে শ্যামল বণিককে পুরস্কৃত করেন।
জানা যায় বাল্যবিবাহ বন্ধে ও কাজসহ জঙ্গী, সন্ত্রাস দমন সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড করে ও সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বণিক।
এদিকে বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বণিক তার ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাস মাধ্যমে জানাচ্ছেন অভিনন্দন। শেখ রফিক স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন সবজায়গায় ভালো থাকবেন স্যার সবাই আপনাকে অনেক ভালোবাসে কারণ আপনার ব্যাবহারের তুলনা হয়না। ফখরুল ইসলাম লিখেছেন আপনার কাজ তো সবসময় শ্রেষ্ঠ প্রসাধনী এজন্য তো শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। এমডি তুয়েমোস আলী লিখেছেন আপনার কার্যক্রম সত্যিই অসাধারণ প্রার্থনা করি এভাবেই ভালোবাসা বিলিয়ে বেঁচে থাকুন মানুষের হৃদয়ে। মাসুম আহমেদ লিখেছেন সত্যিই স্যার আপনি শ্রেষ্ঠত্ব ডিজার্ভ করেন, কতটা ভাল্লাগছে বিষয়টি দেখে। এরকম সহকর্মীদের প্রতি আচরণ থাকলে সহকর্মীরাই আরও কাজের স্পৃহা পাবে স্যার।মোঃ বসির মিয়া লিখেছেন সিলেট এবং সুনামগঞ্জ দুটি জেলার শ্রেষ্ট ওসি হওয়ার খ্যাতি পাওয়া-ওসমানীনগর থানার সাবেক ওসি, একজন সুন্দর ভাবধারার ও গুনী মানুষ,বৃহত্তর সিলেটের মাধবপুর উপজেলার কৃতি সন্তান, ওসি জনাব শ্যামল বনিক মহোদয়কে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও আগামীর পথচলায় শুভ কামনা।খায়রুল আলম লিখেছেন সততা, মেধা এবং পরিশ্রম একদিন অনেক দূর নিয়ে যায়। আপনার প্রতি বালবাসা অবিরাম।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বণিক জানান, বিশ্বম্ভরপুর থানায় যোগদানের পর হইতে ৫টি খুন মামলায় ৯ জন আসামী গ্রেফতার ও ১জন আসামী ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি প্রদান করেন। মাদকের ভয়াবর ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে ২০টি মাদক মামলায় ২৮ জনকে গ্রেফতার এবং ৭৩২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫কেজি ২০৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেন।
শুল্ক ফাঁকি দিয়া অবৈধভাবে চোরাচালান মাধ্যমে মালামাল নিয়া অবৈদ কালো বাজার বন্ধে ২১টি চোরাচালান মামলায় ৩৩জন আসামী গ্রেফতার করি এবং ৩০১ বোতল ভারতীয় মদ, ২৬৭ বস্তা ভারতিয় চিনি, ৪টি ভারতীয় গরু, ১ হাজার ১৫০ টাকার জাল নোট, ৫০ বস্তা পেয়াজ উদ্ধার। চুরি, ডাকাতি, চিনতাই, দস্যুতা রোধ কল্পে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করিয়া ০৮ টি চুরি মামলার মোট ১২ জন গ্রেফতার, ১৩টি চোরাই গরু উদ্ধার করি। ১টি নারী ও শিশু নির্যাতন ধর্ষণ মামলায় ২ আসামী গ্রেফতার করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ০৩টি মামলায় ৩জন আসামীকে গ্রেফতার করিয়া বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করি। পেনাল কোড আইনের অপহরন মামলার ভিকটিম উদ্ধার করি। যোগদানের পর থেকে ৫১ টি জিআর তামিল (বডি), ৪৮ টি সিআর তামিল (বডি), ৮ টি জিআর সাজা ও ৩ টি সিআর সাজা তামিল (বডি) তামিল করিয়া বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করি এবং ১১জন নিখোঁজ ভিকটিম উদ্ধার করিয়া তাদের পরিবারের লোকজনকে বুঝাইয়া দেন।
গত জুলাই হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আনুপাতিক হারে অধিক সংখ্যাক মামলা নিষ্পত্তি ও গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় মাননীয় ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ মহোদয়ের নিকট হইতে শেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে বিশেষ পুরস্কার পাই।
এছাড়াও থানা কম্পাউন্ডের ভিতর ভবনের সামনে অত্যন্ত যতœ ও আন্তরিকতার সাথে শীতকালীন ফুলের বাগান তৈরী করা হয়েছে। এতে থানার সার্বিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছেন। প্রতিদিন ফুলের বাগান যথাযথ ভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে। সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ফুলবাগানের প্রতিটি সারির ইট এবং বাহিরের পাকা বর্ডার রং করানো হয়েছে।
অফিসার-ফোর্সদের ফিটনেস রক্ষার স্বার্থে থানার প্রত্যেক অফিসার-ফোর্স ফুটবল খেলায় অংশগ্রহনের জন্য থানা কম্পাউন্ডের পূর্ব দিকে অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ০১টি ফুটবল খেলার মাঠ তৈরী করা হয়েছে। থানার অফিসার-ফোর্স দিনে এবং রাতে যেন খেলায় অংশগ্রহন করতে পারে সেই লক্ষে রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
থানা ভবনের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিসহ থানার ভবনে ডিউটি অফিসারের কক্ষের দক্ষিন পার্শ্বে এ্যালুমিনিয়াম ও গ্যাসের ব্যবহার করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাবে নারী শিশু ডেস্ক এবং সার্বিস ডেস্ক তৈরী করা হয়েছে। ডেস্কটি অস্বচ্ছ গ্যাস দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা হয়েছে। এতে ভবনের সৌন্দয্য ও কাজের মান বৃদ্ধি পয়েছে। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্প ডেস্কে সেবা প্রার্থীদের সুবিধার জন্য যথাযথ বসার ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হইয়াছে। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী হেল্প ডেস্কে মা কর্তৃক শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো সুবিধার্থে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে।
থানা এলাকার যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখা ও ক্রিড়া মুখী করার লক্ষ্যে বিশ্বম্ভরপুর থানার পক্ষ থেকে ফুটবল টিম, কাবাডি টিম গঠন করে থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রীতি ম্যাচ খেলা এবং মাদক, বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সহ সকল ধরনের অপরাধ থেকে লোকজনকে দূরে সরে আসার আহব্বান করা।থানার অফিসার-ফোর্সের কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্য থানায় প্রতিমাসে এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ৩ ক্যাটাগরিতে ভালো ও আন্তরিক কাজের জন্য পুরুষ্কার প্রদান করা হয়।
থানার সকল অফিসার ফোর্সের রক্তের গ্রুপ সংগ্রহ করা এবং নিয়মিত ভাবে রক্তা দানে থানার অফিসার-ফোর্সকে উৎসাহ প্রদান। অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক নিয়মিত ভাবে রক্ত দান করে আসছেন। করোনা জয় করার পর প্লাজমা প্রদানেও অফিসার ইনচার্জ শ্যামব বনিক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
শ্যামল বনিক বিশ্বম্ভরপুর থানায় যোগদানের পর থানা বিল্ডিং সহ থানার কম্পাউন্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অগ্রণী ভূমিকা রাখা হচ্ছে। পূর্বের যে কোন সময়ের থেকে বিশ্বম্ভরপুর থানা বিল্ডিং এবং থানা কম্পাউন্ড পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে অনেকে এগিয়ে। বিশ্বম্ভরপুর থানার প্রতিটি বাজারের নাইট গার্ডদের মধ্যে লাইট, বাশি বিতরণ এবং বাজার কমিটি সহ ব্যবসায়ীদের উক্ত কাজে উৎসাহ প্রদান করি।
বিশ্বম্ভপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক জানান, বিশ্বম্ভরপুর থানার সব অফিসার ও ফোর্সদের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই তার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। সিলেট বিভাগের এই শ্রেষ্ঠত্ব থানার সকল অফিসার ও ফোর্সকে উৎসর্গ করেন তিনি।